বরগুনার সাবেক এসডিও সিরাজ উদ্দীন আহমেদ স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২২ ভূষিত হয়েছেন।
সিরাজ উদ্দীন আহমেদ এর পরিচয় ও বিশেষ অবদান সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-
বীর মুক্তিযোদ্ধা, ক্যারিয়ার ব্যুরুক্র্যাট, গবেষক, লেখক ও অর্থনীতিবীদ সিরাজ উদদীন আহমেদ ১৯৪১ সালের ১৪ অক্টোবর বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের আরজিকালিকাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৬২ সালে অর্থনীতিতে এম এ এবং ১৯৬৮ সালে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৭১ সালে বরগুনা জেলা সংগ্রাম কমিটির সমন্বয়কারী ছিলেন এবং একজন গেজেটভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা।
সিরাজ উদ্দীন আহমেদ ১৯৭৫ সালে সিভিল সার্ভিসের প্রশাসনের সদস্য হিসেবে বরগুনা মহকুমার এসডিও ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বেতারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার সংবাদ পেয়ে বরগুনা মহকুমার তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক হিসেবে তাৎক্ষণিক হত্যার প্রতিবাদ করেন। তিনি ঘোষণা করেন, “This is the end of my life”.
সামরিক সরকারের নির্দেশ উপেক্ষা করে, তিনি বরগুনা মহকুমায় সামরিক আইন ও কার্ফু জারি করেননি এবং ১৬ আগস্ট এসডিও বাসভবনে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের স্মরণে শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হতে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রতি অনুগত ছিলেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতা হত্যার প্রতিবাদে সিরাজ উদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে বরগুনায় ১৯৭৫ সালের ৬ নভেম্বর হরতাল পালিত হয়।
উল্লেখ্য জেল হত্যার প্রতিবাদে বরগুনা ব্যতীত কোথাও হরতাল ও প্রতিবাদ হয়নি। ১৯৭৫ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর অবৈধ সামরিক সরকার তাকে চাকুরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে। সংস্থাপন বিভাগ গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করে। ১৯৭৭ সালে তাকে চাকুরিতে পুনর্বহাল করা হয়। সেদিন তিনি লিখিতভাবে বলেছিলেন, তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছেন এজন্য তিনি গর্বিত। তিনি কোন বন্ড স্বাক্ষর করেননি।
১৯৯৬ সালের মার্চ মাসে জনতার মঞ্চে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগে সচিব ড. মহিউদ্দিন আহমেদসহ তার বিরুদ্ধে ২০০২ সালের এপ্রিল মাসে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলা সাড়ে সাত বছর চলে পরবর্তীতে ২০০৯ সালের ৬ এপ্রিল অব্যাহতি পায়।
সিরাজ উদ্দীন আহমেদ বৃহত্তর খুলনা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য ছিলেন। ২০০৩ সালের ১৪ অক্টোবর তার চাকুরিজীবনের কর্মকাল সমাপ্ত হয়। তিনি জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ, ন্যাম ও সার্ক সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।
বরগুনা জেলার উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে জেলার জনগণ বরগুনা পৌর টাউন হলের নামকরণ করেছেন সিরাজ উদ্দীন মিলনায়তন। বরগুনা শহরে তার নামে সড়ক রয়েছে। বরগুনার জনগণ মুক্তিযুদ্ধে ও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তার অবদান এখনো শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন