আজ ২৩ মার্চ, ঐতিহাসিক পতাকা দিবস। দিনটি বেশ ঘটনাবহুল। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য আজকের দিনেও অনেকেরই অজানা জাতীয় পতাকা ব্যবহারের সঠিক নিয়ম। তবে জাতীয় পতাকা ব্যবহারের নিয়মগুলো জানা আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চলুন জাতীয় পতাকা ব্যবহার ও এসম্পর্কিত নিয়ম-কানুন নিয়ে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক-
People’s Republic of Bangladesh Flag Rules, 1972
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পতাকা বিধিমালা, ১৯৭২ অনুযায়ী জাতীয় পতাকা মাপের সুনির্দিষ্ট বিবরণ-
জাতীয় পতাকা গাঢ় সবুজ রঙের হবে এবং ১০:৬ দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের আয়তক্ষেত্রাকার সবুজ রঙের মাঝখানে একটি লাল বৃত্ত থাকিবে। লাল বৃত্তটি পতাকার দৈর্ঘ্যরে এক-পঞ্চমাংশ ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট হবে।
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা সবুজ আয়তক্ষেত্রের মধ্যে লাল বৃত্ত। সবুজ রং বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি ও তারুণ্যের প্রতীক, বৃত্তের লাল রং উদীয়মান সূর্য, স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারীদের রক্তের প্রতীক। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার এই রূপটি ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি সরকারীভাবে গৃহীত হয়।
জাতীয় পতাকা প্রথম উত্তোলন :
২ মার্চ বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা দিবস। একাত্তরের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে প্রথম জাতীয় পতাকা তোলা হয়েছিল। সবুজ জমিনের ওপর লাল বৃত্তের মাঝখানে সোনালি মানচিত্র খচিত পতাকা। ওইদিন পতাকা উত্তোলন করেছিলেন ডাকসুর সহ-সভাপতি আ স ম আবদুর রব।
বিধি-৪ (১) অনুসারে নিম্নলিখিত দিনগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হবে।
ক.মহানবীর জন্ম দিবস (ঈদ এ মিলাদুন্নবী)
খ.৭ ই মার্চ ঐতিহাসিক ৭ ই মার্চ দিবস (সংশোধনী ২০২১)
গ.২৬ শে মার্চ (মহান স্বাধীনতা দিবস)
ঘ.১৬ ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস এবং সরকার কর্তৃক প্রকাশিত অন্য যে কোন দিবস।
বিধি ৪.১ (২)-এ বলা আছে নিম্ন বর্ণিত দিবস সমূহে পতাকা অর্ধনমিত থাকিবে:
(ক) ২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস;
(খ) ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস; এবং
(গ) সরকার কর্তৃক প্রজ্ঞাপিত অন্য যে কোন দিবস।
বিধি ৭ এর (১-২৬) এ বলা আছে পতাকা’র সম্মান বজায় রাখার বিষয়ে।
বিধি-৭ এর (১) সর্বদা পতাকার প্রতি যথাযথ সম্মান এবং মর্যাদা প্রদান করিতে হইবে।
বিধি-৭ এর, (৪) যে ক্ষেত্রে দুটি পতাকা বা রঙিন পতাকা উত্তোলন করা হয় সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ভবনের ডানপাশে উত্তোলন করিতে হইবে।
বিধি- ৭ এর (২৩) এ পরিষ্কার উল্লেখ করা হয়েছে যে , পতাকা দ্রুততার সহিত উত্তোলন করিতে হইবে এবং সম্মানের সহিত তা নামাইতে হইবে।
সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলনকালে পতাকাটি প্রথমে সোজাভাবে দণ্ডায়মান পতাকাদণ্ডে রশির সাহায্যে পতাকাদণ্ডের মাথা পর্যন্ত উত্তোলন করতে হবে। এর পর দণ্ডের মাথা থেকে পতাকার প্রস্থের সমান নিচে নামিয়ে পতাকাটি বাঁধতে হবে। দিনশেষে পতাকাটি যখন নামাতে হবে তখন পতাকাটি আবার দণ্ডের মাথা পর্যন্ত উত্তোলন করতে হবে এবং তারপর ধীরে ধীরে নামাতে হবে।
আমাদের অর্জন জাতীয় পতাকার ক্ষেত্রে :
২০১৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে ঢাকার শেরে বাংলা নগরের জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ২৭,১১৭ জন মানুষের উপস্থিতিতে ‘মানব পতাকা’ গঠন করা হয়, যা গিনেস বিশ্ব রেকর্ডে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানব পতাকা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সাবধানতা : আপনি যদি অত্র আইনের কোন একটি বিধি লংঘন করেন অথবা এমন কোন কাজ করেন যা বিধি পরিপন্থী বা জাতীয় পতাকার জন্য অসম্মান জনক সেক্ষেত্রে যে কোন ব্যক্তি বাদী হয়ে আপনার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : ছেঁড়া বা বিবর্ণ জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা যাবে না। মানসম্মত কাপড়ে যথানিয়মে তৈরি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে হবে।
মো. হাসিবুর রহমান (হাসিব) মুন্সী
অ্যাডভোকেট, জজ কোর্ট, বরগুনা