ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯
(২০০৯ সনের ২৬ নং আইন)
১৫ মার্চ, ১৯৬২ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডি কংগ্রেসে ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে বক্তৃতা দেন।
১। নিরাপত্তার অধিকার,
২। তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার,
৩। পছন্দের অধিকার।
৪। অভিযোগ প্রদানের অধিকার।
ভোক্তাদের এ চারটি মৌলিক অধিকার সম্পর্কে তিনি আলোকপাত করেন, যা পরবর্তীতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন নামে পরিচিতি পায়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য :
ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ, ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্য প্রতিরোধ ও তৎসংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে বিধান করিবার লক্ষ্যে প্রণীত আইন।
ভোক্তা অধিকার আইনে ভোক্তার অধিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ব বন্ধে আইনের পাশাপাশি জনগণের সচেতনতা সৃষ্টি প্রয়োজন। একজন ভোক্তাকে জানতে হবে তার কোন ধরনের অধিকার রয়েছে। অন্য সকল অধিকার থেকে অনেকটা ব্যাতিক্রম ভোক্তা অধিকার।
ভোক্তা কে বা কারা?
ভোক্তা হলো কোনো ব্যাক্তি যিনি তার ব্যক্তিগত পছন্দ বা প্রয়োজনে পণ্যসামগ্রী বা সেবা ক্রয় করেন এবং তা নিঃশেষ করেন। অর্থাৎ যে সকল ব্যক্তি বা ব্যক্তি সমষ্টি কোনও বিক্রেতা হতে পণ্য বা সেবা ক্রয় করেন এবং সেই পণ্য বা সেবার উপযোগ নিঃশেষ করেন তাকে ভোক্তা বলে। সুতরাং, ভোক্তা হল কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যিনি কোনও পণ্য বা পরিষেবার চূড়ান্ত ব্যবহারকারী।
ভোক্তার অধিকারের ক্ষেত্রসমূহ :
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ অনুযায়ী, ক্রেতা যেসব বিষয়ে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন, তা হলো-
১। বিক্রেতার পণ্যের মোড়ক ব্যবহার না করা। ধারা-৩৭
২। মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করা। ধারা-৩৮
৩। সেবার তালিকা সংরক্ষণ ও প্রদর্শন না করা। ধারা-৩৯
৪। অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রয় করা। ধারা-৪০
৫। ভেজাল পণ্য বিক্রয়। ধারা-৪১
৬। খাদ্যপণ্যে নিষিদ্ধ দ্রব্যের মিশ্রণ। ধারা-৪২
৭। অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন। ধারা-৪৩
৮। মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা প্রতারণা। ধারা-৪৪
৯।প্রতিশ্রুত পণ্য সরবরাহ না করা। ধারা-৪৫
১০।ওজনে ও পরিমাপে কারচুপি। ধারা-৪৬
১১।দৈর্ঘ্য পরিমাপের ক্ষেত্রে গজফিতায় কারচুপি। ধারা-৪৭
১২। নকল পণ্য প্রস্তুত। ধারা-৫০
১৩। মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রয়। ধারা-৫১
১৪। অবহেলা। ধারা-৫৩
অভিযোগ দায়েরের পদ্ধতি :
ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ধারা ৭৬ (১) অনুযায়ী, ‘যে কোন ব্যক্তি, যিনি, সাধারণভাবে একজন ভোক্তা বা ভোক্তা হইতে পারেন, এই অধ্যাদেশের অধীন ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্য সম্পর্কে মহাপরিচালক বা এতদুদ্দেশ্যে মহাপরিচালকের নিকট ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অবহিত করিয়া লিখিত অভিযোগ দায়ের করিতে পারিবেন।’
যেখানে অভিযোগ দায়ের করা যাবে :
১। মহাপরিচালক, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ১ কারওয়ান বাজার (টিসিবি ভবন-৮ম তলা), ঢাকা, ফোন: +৮৮০২ ৮১৮৯৪২৫
২। জাতীয় ভোক্তা অভিযোগ কেন্দ্র, টিসিবি ভবন- ৯ম তলা, ১ কারওয়ান বাজার ঢাকা, ফোন: ০১৭৭৭ ৭৫৩৬৬৮, ই-মেইল: nccc@dncrp.gov.bd
৩। উপপরিচালক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, টিসিবি ভবন, বন্দরটিলা, চট্টগ্রাম, ফোন: ০৩১-৭৪১২১২
৪। উপপরিচালক, রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, শ্রীরামপুর, রাজশাহী, ফোন: +৮৮০৭ ২১৭৭২৭৭৪
৫। উপপরিচালক, খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, টিসিবি ভবন, শিববাড়ী মোড়, খুলনা, ফোন: ০৪১-৭২২৩১১
উপ পরিচালক, বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, মহিলা ক্লাব ভবন, বরিশাল, ফোন: +৮৮০৪ ৩১৬২০৪২
৬। উপপরিচালক, সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, সিলেট ফোন: ০৮২১-৮৪০৮৮৪
৭। উপপরিচালক, রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিউ ইঞ্জিনিয়ার পাড়া, রংপুর, ফোন: ০৫২১-৫৫৬৯১
৮। প্রত্যেক জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।
যেভাবে অভিযোগ দায়ের করতে হবে :
ক। দায়েরকৃত অভিযোগ অবশ্যই লিখিত হতে হবে।
খ। ফ্যাক্স, ই-মেইল, ওয়েব সাইট, ইত্যাদি ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে।
গ। অভিযোগের সাথে পণ্য বা সেবা ক্রয়ের রশিদ সংযুক্ত করতে হবে।
ঘ। অভিযোগকারী তাঁর পূর্ণাঙ্গ নাম, পিতা ও মাতার নাম, ঠিকানা, ফোন, ফ্যাক্স ও ই-মেইল নম্বর (যদি থাকে) এবং পেশা উল্লেখ করবেন।
বিচারক ক্ষমতা :
অত্র আইনের ৬৩ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটকে বিচার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।
আপিল :
অত্র আইনের ৬৫ ধারা অনুসারে ৬০ দিনের ভিতরে স্থানীয় অধিকারের সেশন জজ আদালতে আপিল দায়ের করতে পারিবেন।
মিথ্যা মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে শাস্তি :
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৫৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, মিথ্যা এবং হয়রানিমূলক মামলার জন্য উক্ত মামলার বাদীকে অনূর্ধ্ব ৩ বছরের কারাদণ্ড বা অনাধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ নিষ্পত্তি হয় ৭ দিনে এবং জরিমানার অর্থের ২৫% দেওয়া হয় অভিযোগকারীকে।
মো. হাসিবুর রহমান (হাসিব) মুন্সী
এল এল.বি (অনার্স) এল এল.এম
অ্যাডভোকেট, জজ কোর্ট, বরগুনা