গত ২ মার্চ ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকে থাকা বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ এমভি বাংলার সমৃদ্ধি রকেট হামলার শিকার হলে গোলার আঘাতে নিহত হন হাদিসুর রহমান আরিফ। দুই মাস পরেও মাতম কমেনি পরিবারের। বরং ঈদে বেদনা বাড়িয়েছে বহুগুণ। হাদিসকে ছাড়া কোনো কিছুই কল্পনা ছিল না পরিবারের। আনন্দ-উৎসবে সবকিছুতেই ছিল তার ছোঁয়া। এখন সেই পরিবারে ঈদুল ফিতরে নেই কোনো আনন্দ।
নিহত নাবিক হাদিসুর রহমান আরিফের গ্রামের বাড়ি বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা এলাকায়। তিনি একই এলাকার অবসরপ্রাপ্ত মাদ্রাসা শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদারের ছেলে। হাদিসুরের বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা, বড় এক বোন ও ছোট দুই ভাই রয়েছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন হাদিসুর। প্রিয়জনকে হারিয়ে এবার বিবর্ণ আর আনন্দবিহীন ঈদ পালন করছেন হাদিসুরের পরিবার।
মঙ্গলবার (৩ মে) ঈদের দিন সকালে নিহত নাবিক হাদিসুর রহমানের বাড়িতে গেলে হাদিসুরের কথা বলতে গিয়ে এভাবেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মা রাশিদা বেগম। এসময় শোকার্ত মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করন আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা।
হাদিসের মা বলেন, ‘আমাদের আর ঈদের আনন্দ নেই। ঈদ আনন্দ হাদিসের সঙ্গেই শেষ হয়ে গেছে। হাদিস ঈদে বাড়িতে আসলে সবার জন্য কেনাকাটা করত। একসঙ্গে সবার সঙ্গে আনন্দে ঈদ করত। ঈদের দিন সালাম করে দোয়া চাইত। কেউ আর দোয়া চাইবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘হাদিসুরের কুলখানির আগে সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ১ লাখ টাকা, সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন এবং বরগুনার পুলিশ সুপার ১৫ হাজার টাকা করে দিয়েছিলেন। সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরা ঈদের আগের দিন প্রধানমন্ত্রীর উপহার দিয়ে গেছেন। তারপরও হাদিসকে ছাড়া তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে আমরা ঈদ করতে পারিনি। কারন হাদিসুরই ছিল আমাদের ঈদ।’
পুরো পরিবারের কারও চেয়ে কারও কষ্ট-বেদনা কম নেই। বাবা আব্দুর রাজ্জাকও মেনে নিতে পারছেন না ছেলে হারানোর শোক। ছেলের কথা বলতে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বারবার তিনিও মূর্ছা যান। অপরদিকে কাঁদতে কাঁদতে হাদিসুরের ছোট ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্স বলেন, ‘প্রতি বছর ঈদ আসলে পরিবারের সবাইকে পছন্দ অনুযায়ী পোশাক কিনে দিতেন ভাইয়া। এবার ঈদে বাড়িতে এসে বিয়ে করার কথা ছিল তার। এবার ঈদে সবাই আছে কিন্তু নেই আমার ভাই।’