এশিয়া কাপে ভারত গত দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন। এবারও তারা জোর দাবিদার ছিল। কিন্তু ফাইনালে উঠার আগেই এক ম্যাচ হাতে রেখে বিদায় নেয়। আফগানিস্তানও দুই ম্যাচ হেরে বিদায় নিয়েছে। কিন্তু তারা শিরোপার জোর দাবিদার ছিল না। তাই দুই দলের ম্যাচটিই ছিল নিয়ম রক্ষার। সেই নিয়ম রক্ষার ম্যাচে ভারতের একি অগ্নিরূপ ধারণ।মরুর বুকে রান বৃষ্টি আর উইকেট ঝড় তুলে আফগানিস্তানকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। প্রথমে ব্যাট হাতে বিরাট কোহলি ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নিতে ৬১ বলে রান বৃষ্টির অপরাজিত ১২২ রানের পর ভুবনেশ্বর কুমার টানা ৪ ওভারে ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং করে উইকেট ঝড় তুলে মাত্র ৪ রানে ৫ উইকেট নিয়ে আফগানিস্তানকে অসহায় করে তুলে। হার মানে ১০১ রানে। ভারতের ২ উইকেটে করা আসরের সর্বোচ্চ ২১২ রানের জবাবে আফগানিস্তান করে ৮ উইকেটে মাত্র ১১১ রান।
নিয়ম রক্ষার ম্যাচে ভারত যে ঝড় তুলেছে আফগানিস্তানের উপর দিয়ে, তা দেখে যে কারও মনে হবে আফগানিস্তানের উপর প্রচণ্ড ক্ষোভ আর জেদ মিটিয়েছে ভারত। তা কিসের এই জেদ? আগের দিন পাকিস্তানের বিপক্ষে নিশ্চিত জেতা ম্যাচটা হেরে যায় আফগানিস্তান। এই ম্যাচ জিততে পারলে সবারই ফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা বেঁচে থাকত। তখন ভারতের এই রকম জয়ে তারাও ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে শামিল হতো। কারণ প্রয়োজনীয় রান রেট তারা ঠিকই বাড়িয়ে নিয়েছিল। তখন প্রয়োজন পড়ত শুধু শ্রীলঙ্কার কাছে পাকিস্তানের হার। পাকিস্তান হারলেই নেট রান রেটে তাদেরকে টপকে ভারতই ফাইনালে সঙ্গী হতো শ্রীলঙ্কার। কিন্তু তীরে এসে আফগানরা তরী ডুবানোতে ডুবে যায় ভারতেরও স্বপ্ন। আর হয়তো তারা আফগানিস্তানকে হারিয়ে প্রমাণ করে দিল, ‘তোমরা যদি পাকিস্তানকে হারাতে পারতে, তাহলে আমাদের কাজটা আমরা ঠিকই এভাবে করে রাখতাম। তা যখন তোমাদের কারণে হয়নি, তখন তোমাদের উচিত একটা শিক্ষা দিয়ে দেই তা যতই নিয়ম রক্ষার ম্যাচ হোক না কেন।’
এমন একটি নিয়ম রক্ষার ম্যাচে ভারতের আস্ফালনে এবারের আসরে কত কিছুই না হয়ে গেল। আসরের দলগত সর্বোচ্চ রান ভারতের ২ উইকেটে ২১২, ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান কোহলির অপরাজিত ১২২ (এই রান আবার ভারতের হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানও। আগের সর্বোচ্চ রান ছিল রোহিত শর্মার ১১৮), ব্যক্তিগত সেরা বোলিং ভুবনেশ্বর কুমারের ৫/৪ (এই ৫ উইকেট নিয়ে ভুবনেশ্বর কুমার যুজবেন্দ্র চাহালকে টপকে ৮৪ উইকেট নিয়ে ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিও বনে গেছেন)। ১৬৯ ম্যাচের ক্যারিয়ারে এসে প্রথমবারের মতো বোলিং করেন দিনেশ কার্তিক।
জয়-পরাজয়ের মাঝে যখন ১০১ রানের ব্যবধান বল হাতে যেখানে ভুবনেশ্বর কুমারের ৪ ওভারে ৪ রানে ৫ উইকেট, সেখানে আফগানদের ব্যাটিং বলতে আর কিছু থাকে না। ছিলও না। ভুবনেশ্বরকে দিয়ে সাধারণত টানা বোলিং করানো হয় না। ডেথ ওভারের জন্য ১-২ ওভার রেখে দেওয়া হয়। কিন্তু প্রথম ওভারে ২টি, দ্বিতীয় ওভারে ১টি উইকেট নেওয়ার পর রোহিত শর্মার বিশ্রামে অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া লুকেশ রাহুল তাকে দিয়ে তৃতীয় ওভারও বোলিং করান। আবারও উইকেট পাওয়ায় পরে টানা চতুর্থ ওভারও করানো হয় ভুবনেশ্বরকে দিয়ে। শেষ ওভারে তিনি তুলে নেন আরও ১টি উইকেট। এর মাঝে আবার আর্শদ্বীফ সিংও অধিনায়ক মোহাম্মদ নবীকে আউট করে তুলে নেন ১টি উইকেট। ফলে আফগানদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ২১। হংকংয়ের ৩৮ রানকে পেছনে ফেলার শঙ্কা। কিন্তু তা আর শেষ পর্যন্ত হয়নি, আবার দলীয় রানও শতক পার হয় দ্বিতীয় ওভারেই ক্রিজে আসা ইব্রাহিম জাদরান এক প্রান্ত আগলে রেখে ৫৯ বলে ২ ছক্কা ও ৪ বাউন্ডারিতে ৬৪ রান করে অপরাজিত থাকলে। ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি করেন তিনি ৫৫ বলে। দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ছিল মুজিবুর রহমানের ১৮। এ ছাড়া রশিদ খান করেন ১৫ রান। আর কোনো ব্যাটসম্যান দুই অংকের ঘরে যেতে পারেননি। ভুবনেশ্বর ছাড়া ভারতের হয়ে ১টি করে উইকেট নেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন, আর্শদ্বীপ সিং ও দিপক হুদা।
বিরাট কোহলি ও ভুবনেশ্বর কুমারের ম্যাচ সেরার লড়াইয়ে জয়ী হয়েছেন বিরাট কোহলি।