স্বামীর পরকীয়ায় প্রেমে বাধা দেওয়া স্ত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়ে হত্যা করার অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় স্বামীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও এক লাখ টাকা অর্থ দন্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। ৭ দিনের মধ্য অর্থ আদায় করে বাদীকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বরগুনা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে।
বুধবার সকালে বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এ রায় ঘোষনা করেন। রায় ঘোষনার সময় আসামী পলাতক ছিল। দন্ডপ্রাপ্ত আসামী হল, বরগুনা জেলা বেতাগী উপজেলার তালগাছিয়া-দেশান্তরকাঠী গ্রামের মৃত. মুনসুর আলী ওরফে নয়া মিয়া হাওলাদারেরর ছেলে মো. জাহাঙ্গীর আলম (৫২)
মামলা সূত্রে জানা যায়, আসামীর স্ত্রীর বাবা বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ উপজেলার সন্নাসী গ্রামের মজিবর রহমান ২০০৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী বেতাগী থানায় দন্ডপ্রাপ্ত আসামীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। তিনি অভিযোগ করেন ১৯৮৭ সালে তার মেয়ে আসমা বেগম (৩৬)কে জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে বিয়ে দেয়। তাদের সংসার জীবনে চার সন্তানের জম্ম হয়। জাহাঙ্গীর আলম যৌতুক লোভী হওয়ায় প্রায়ই বাদীর মেয়ে আসমাকে নির্যাতন করিত। এ ছাড়া বাদীর জামাতার চরিত্র ভাল ছিল না। পরনারীর প্রতি আসক্ত ছিল। এ সব বিষয় নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্য সম্পর্ক ভাল ছিল না। আসামী তার একই গ্রামের জনৈক বিধবা জাহানারার সঙ্গে আসামী পরকীয়ায় জড়িয়ে যায়। বাদীর মেয়ে আসমা বেগম পরকীয়ার বিষয়টি জেনে যায়। এ নিয়ে তাদের দাম্পত্য জীবনে চরম অচলবস্থা দেখা দেয়। ২০০৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যার সময় আসামী জাহাঙ্গীর আলম তার বসত ঘরে বসে আড়ালে পরকীয়া প্রেমিক জাহানারার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে।
বাদীর মেয়ে আসমা দেখে প্রতিবাদ করে। এ সময় উভয়ের মধ্য বাক বিতন্ডা হয়। জাহাঙ্গীর তার স্ত্রীর উপর চড়াও হয়ে ঘরের পিছনের বারান্দায় নিয়ে আসমাকে বেদম মারপিট করে মুখ মন্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্তাক্ত জখম করে। এক পর্যায়ে জাহাঙ্গীর আলম তার ঘর থেকে কেরোসিনন এনে স্ত্রীর কাপড়ে ও শরীরে ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। আসমার ছোট মেয়ে আরিফা দেখে তার ডাক চিৎকারে আশ-পাশের লোকজন জড়ো হয়। এই ফাঁকে আসামী পালিয়ে যায়। আগুনে আসমার ডান বাহু বুকের নিম্ন ভাগসহ শরীরের নিম্নাংশ আগুনে পুড়ে যায়। বাদী মামলার করার পরে তদন্ত করে এসআই জসিম উদ্দিন ২০ জুন আসামীর বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করেন।
আসমাকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে বরিশাল পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করায়। বাদী জানান, আমি খবর পেয়ে প্রথমে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে মহিলা সার্জারী ইউনিট-১ এ আমার জখমী মেয়েকে মুমূর্ষ অবস্থায় দেখতে পাই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সুচিকিৎসার জন্য আসমাকে ১২ ফেব্রুয়ারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমার মেয়ে আসমা ২০০৯ সালের ৫ মার্চ মারা যায়।
পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, এ রায় আমরা সন্তুস্ট। রাস্ট্র আশা করে দ্রুত সময় আসামীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হোক।
আসামী পক্ষের আইনজীবী মো. নুরুল আমীন বলেন, আসামী ৮ বছর জেল হাজতে ছিল। হাই কোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে পলাতক হয়েছে। আসামীর আপীল করতে হলে ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পন করতে হবে।