বহুল আলোচিত বরগুনার শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলার তিন বছর পূর্ণ হলেও উচ্চ আদালতে ঝুলে আছে মামলার বিচারকাজ। এতে হতাশ নিহত রিফাতের পরিবার। দ্রুত বিচার শেষে রায় বাস্তবায়নের দাবি স্বজন ও এলাকাবাসীর।
বর্তমানে স্মৃতির পাতায় ছবি হয়ে আছেন রিফাত। সেই ছবির মধ্যেই একমাত্র ছেলেকে খুঁজে বেড়ান রিফাতে অসুস্থ মা ডেইজি আক্তার। অপরদিকে ছেলের শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বাবা দুলাল শরীফও। এছাড়াও দণ্ডিত আসামিরা জামিনে মুক্তি পাওয়ায় ক্ষুব্ধ তারা। তাই দ্রুত বিচার শেষে আসামিদের রায় বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন রিফাতের পরিবার, স্বজন ও এলাকাবাসী।
নিহত রিফাতের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ বলেন, রিফাত আমার একমাত্র ছেলে ছিল। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সুখের সংসার ছিল আমার। মিন্নির কারণে সেই সুখের সংসার ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের ছেলে হত্যাকাণ্ডের বিচার কার্যকর হলে হয়তো কিছুটা সান্ত্বনা পাব। এ মামলার দ্রুত বিচার শেষে রায় বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।
অপরদিকে কান্না জড়িত অবস্থায় নিহত রিফাতের মা ডেইজি আক্তার বলেন, ছেলেকে ছাড়া আমি থাকতে পারি না। আমি চাই এ মামলার দ্রুত বিচার শেষে রায় বাস্তবায়ন হোক।
আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, কোন আপিলই এখন পর্যন্ত শুনানি হয়নি। সকল আপিলই শুনানির জন্য আছে। কিন্তু ওই যে পাঁচ শিশু তারা পাঁচ বছরের নিচে বা পাঁচ বছর সাজা হয়েছে, এই পাঁচজন জামিনে আছেন। যে ছয়জনের দশবছর সাজা হয়েছিল তাদের এখন পর্যন্ত জামিন হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রিফাতকে। বন্ড বাহিনীর নৃশংস এ হামলার রোমহর্ষক একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। দাবি ওঠে দ্রুত দোষীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির।
এ ঘটনার পরের দিন বরগুনা সদর থানায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত রিফাত শরীফের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ।
নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ছয় দিন পর এ মামলার প্রধান আসামি বন্ড বাহিনী প্রধান সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডের ২০ দিন পর এ মামলার প্রধান স্বাক্ষী ও নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পরবর্তীতে ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয় আসামিকে ফাঁসির আদেশ দেন বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এরপর ওই বছরের ২৭ অক্টোবর অপ্রাপ্তবয়স্ক ১১ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন জেলা শিশু আদালত। রায়ের পর দণ্ডিত সকল আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন। এখন সেই আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়াও এ মামলায় দণ্ডিত ১৭ আসামির মধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্ক ৫ আসামি জামিনে রয়েছেন।
এ মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- রাকিবুল হাসান ওরফে রিফাত ফরাজী, আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান এবং আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি।