সংযোগ সড়কের জমি নিয়ে স্থানীয়দের সাথে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় বরগুনার বামনা উপজেলায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতু কোন কাজে আসছেনা। স্থানীয় বাসিন্দারা সংযোগ সড়ক না থাকায় অন্তত ২০ গ্রামের মানুষ সেতুর পাশে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো তৈরি করে খালটি পারাপাড় হচ্ছেন। ঠিকাদার ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের দাবি স্থানীয়রা সংযোগ সড়ক নির্মাণের জমি ছাড়ছেন না, সে কারণে এমন দীর্ঘসূত্রিতা।
বরগুনা বামনা উপজেলার রামনা ইউনিয়নের উত্তর রামনা খোলপটুয়া, গোলাঘাটা ও ডৌয়াতলা এই চার এলাকার বাসিন্দাদের জন্য সেতুটি গুরুত্বপূর্ণ। রামনা ইউনিয়নের এলাকার বাসিন্দাদের বামনা উপজেলা সদরে যাতায়তে খোলপটুয়া হয়ে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করতে হয়। ব্রিজের দক্ষিণপাড়ের গোলাঘাটা-ডৌয়াতলা সড়ক, উত্তরপাড়ে উত্তর রামনা থেকে খোলপটুয়া সড়ক। এই দুই সড়কের সংযোগে ব্রিজটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিজের উত্তরপাড়ে রামনা শেরেবাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রায় পাচ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী অধ্যায়নরত।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বরগুনা কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০১৮ সালের জুন মাসে ২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয় ধরে প্রাক্কলন অনুমোদন দেয় এলজিইডি। এম এম ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্রিজ নির্মানের কাজ পায়। ২০১৮ সালের শেষের দিকে ঠিকদারি প্রতিষ্ঠান পুরনো লোহার সেতু ভেঙে গার্ডার ব্রিজের কাজ শুরু করেন। কিন্ত পিলার বসানো নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়ায় নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখে। পরে ২০১৯ সালের শেষের দিকে ফের কাজ শুরু করেন ঠিকাদার। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মূল সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করেণ ঠিকাদার। সেতুর উভয়পাড়ের সড়ক অপ্রসস্ত হওয়ায় সংযোগ সড়ক নির্মাণের জমি নিয়ে স্থানীয়দের সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এরপর কাজ ফেলে রেখে চলে যান ঠিকাদার। পরে স্থানীয়রা সেতুর পশ্চিম পাশে বাঁশের সাঁকো তৈরী করে খাল পার হচ্ছেন স্থানীয়রা। বাঁশের সাঁকো দিয়ে কোন মতে মানুষ চলাচল করলেও যানবাহন চলতে পারছেনা।
রামনা শেরেবাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসেন বলেন, স্কুলের শিক্ষার্থীরা আগে পুরনো সেতু পারপার করতে পারত। ব্রিজ হওয়ার পরও এখনও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বাঁশের সেতু পার হতে হয়। খালে পানি বাড়লে শিক্ষার্থীদের বাঁশের সাঁকো দিয়ে পড়ে গিয়ে আহত হয় অনেকে। আমাদের দাবি এপ্রোচ সড়ক নির্মাণ খুব জরুরি।
স্থানীয় রাসেল আহম্মেদ তানু বলেন, এই ব্রিজের কারনে গর্ভবতী নারীদের চিকিৎসা দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স এই ব্রিজ পারপার হতে পারে না। এখানে কোন অ্যাম্বুলেন্স আসতে চায়না। আমরা এই অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি চাই এবং ব্রিজটি খুব দ্রুত দরকার।
কলেজ শিক্ষার্থী সালমা বলেন, প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে কলেজে যেতে হয়। সময় মত গাড়ি পাওয়া যায় না এর কারনে ঠিক মতো কলেজে ক্লাস করতে সমস্যা হয়। এটি খুবই বিরম্বনা ও ভোগান্তির।
ওই এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জোমাদ্দার বলেন, এপ্রোচ সড়ক নির্মাণে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার ভিটেমাটির জমি ছাড়তে হবে। এ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার কাজ বন্ধ হয়েছে। আমি এলাকার বাসিন্দাদের সাথে কথা বলেছি। ক্ষতিপূরণ দিলে এপ্রোচ সড়কের জন্য জমি ছাড়বেন তারা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের বরগুনা কার্যালের নির্বাহী প্রকৌশলী সুপ্রিয় মুখার্জি বলেন, আমি যোগদানের পর সেতুটির বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়েছি। সেতুর এপ্রোচ সড়ক পুনঃনির্মানের জন্য বিভাগীয় প্রকৌশলী ও প্রধান প্রকৌশলীর কাছে প্রাক্কলন করে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলেই কাজ শুরু করবে।