বরগুনার একটি স্কুলকে ঘিরে বখাটেদের উৎপাত বেড়েছে। স্কুলগামী ছাত্রীদের অভিযোগ, স্থানীয় কিছু বখাটে নিয়মিতপথেঘাটে তাদের উত্যক্ত করছে। উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার এ বিষয়ে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, বিষয়টি তারা গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন।
বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নে নাপিতখালি পঞ্চগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যলয়ে এই এলাকার প্রায় তিনশতাধিক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত। স্থানীয় অভিভাবকরা জানান, বিদ্যালয়ে যাওয়া আসার পথে স্থানীয় কিছু বখাটে নিয়মিত ছাত্রীদেও উত্যক্ত করে। গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি একজন ছাত্রী উত্যক্ত করেছিল বখাটেরা। বিষয়টি পরবর্তিতে সালিস মিমাংসায় নিষ্পত্তি হলেও বখাটেদেও উৎপাত কমেনি।
ভুক্তভোগীদের কয়েকজন ছাত্রী জানান, স্কুলে প্রবেশ কিংবা ছুটির সময় অথবা রাস্তাঘাটে চলার পথে বখাটেরা স্কুল গেট ও তার আশপাশে অবস্থান করে। এরপর সুযোগ বুঝে আমাদের প্রতিনিয়ত অশালীন উক্তি ছুড়ে দেয়। ছাত্রীদের মধ্যে অনেকেই বখাটে দ্বারা উৎপাতের শিকার হলেও লোকলজ্জার ভয়ে কেউ ঘটনা প্রকাশ করছে না। বখাটেদের এসব অশালীন উক্তি ছাত্রীরা নীরবে সহ্য করে গন্তব্যে যেতে হয়। আর কেউ প্রতিবাদ করলে তাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়া হয়।
নবম শ্রেণির এক ছাত্রী বলেন, আমরা সবসময় তাদের (বখাটেদের) ভয়ে থাকি। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি আমরা। আমরা এর একটা প্রতিকার চাচ্ছি! সুন্দর ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়া করে লেখাপড়া করতে চাই! আমরা ইভটিজারদের হাত থেকে রেহাই চাই।
স্থানীয় অভিভাবক আনোয়ার হোসেন আকন বলেন, আমি আমার মেয়ে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। কোনো প্রতিরোধ না থাকায় অসামাজিক কার্যকলাপ, অপকর্ম দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। আমরা এর একটা বিহিত চাই। একই অভিযোগ কামারল গাজী নামের আরেক অভিভাবকের। তিনি বলেন, মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে প্রতিটা মুহুর্ত দুশ্চিন্তায় কাটে আমাদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র জানান, স্থানীয় আনোয়ার হোসেনের ছেলে মোঃ রাব্বি, বারেক ফকিরের ছেলে মোঃ আলফেসানি, মোস্তফার ছেলে মোঃ স্বপনসহ এদের সহযোগীরা প্রতিনিয়ত ছাত্রীদেও উত্ত্যক্ত করে আসছে। উত্যক্তের অভিযোগে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্কুল শিক্ষকদেও কাছে অভিযোগও হয়েছে । সালিশ মীমাংসা হলেও আবারো তারা একই কাজ করে যাচ্ছে।
ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বলেন, বিষয়টি নিয়ে অভিভাবক ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা হয়েছে। আমি অভিযুক্ত কয়েকজনের অভিভাবকদের ডেকে সতর্ক করেছি। এরপরও কেউ ইভটিজিং করলে তাকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করা হবে।
স্কুল প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) জাকির হোসেন বলেন, ছাত্রীরা স্কুলে আসা-যাওয়া, চলার পথে কখনও এককভাবে আবার কখনও দলবদ্ধভাবে বখাটেরা ছাত্রীদের উত্যক্ত করে আসছে। আমি মঙ্গলবার এ বিষয়ে বরগুনা সদর সার্কেলের এসপি মেহেদী হাসানের কাছে লিখিত দিয়েছি। তিনি আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মেহেদী হাসান জানান, গতকাল ৯৯৯ ইভটিজিংয়ের কল পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। ওইসময় পুলিশ পাঠালেও ইভটিজারদের ধরা সম্ভব হয়নি। মঙ্গলবার লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।