ক্ষেত-খামারের ফসল, মাছ ও ফল রক্ষা করার জন্য ক্ষেতে বেড়া ও গাছে জাল ব্যবহার করার প্রচলন রয়েছে সর্বত্র। আগে ক্ষেতের বেড়ায় বাঁশ, সরুকাঠ, পাঠকাঠি, ধইঞ্চা প্রভৃতির ব্যবহার হলেও ইদানিংকালে চিকন নাইলনের সূতার জাল (কারেন্ট জাল) ব্যবহার করার প্রবনতা বেশি। এতে ফসল ও ফল রক্ষা করা যাচ্ছে ঠিকই সেই সঙ্গে বুঝে বা না বুঝেই চাষিরা হত্যা করছেন আমাদের প্রকৃতির নানা প্রজাতির পাখি। এতে প্রকৃতি ভারসাম্য হারাতে পারে এবং হুমকিতে পড়বে আমাদের জীববৈচিত্র্য।
বরগুনা উপকূলীয় এলাকায় এমনিতেই দেশী প্রজাতির পাখির আধিক্য রয়েছে। স্থানীয় মানুষের সৃজন করা গাছ-গাছালিসহ বন-জংগলের গাছ-গাছালির ফল, পোকা-মাকড় খেয়েই এরা বেঁচে থাকে। ঘর-বাড়ির আঙিনায়, বা লাগোয়া বাগানে হাঁস, মুরগি, চড়–ই, শালিক, ঘুঘু, ক্যাচক্যাচি, বুলবুলি নানা জাতের পাখি সব সময়েই বিচরন করে। মানুষের বিছিয়ে বা টাঙিয়ে রাখা জালের ফাঁদে এ পাখিগুলো আটকে পড়ে প্রাণ হারাচ্ছে।
বরগুনা সদর উপজেলার সদর ইউনিয়নের কড়ইতলা গ্রামের আহসান হাবির দেড় একর জমিতে আম, জাম ও নানা ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন। এই বাগানে ঝাঁকে-ঝাঁকে শালিক, বুলবুলি পাখিসহ নানা প্রজাতির পাখি এসে ভিড় করে। পাখির হাত থেকে ফল রক্ষার জন্য গাছ জাল দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। এতে ফল খেতে আসা প্রাণীগুলো জালে আটকা পড়ছে এবং পরবর্তীতে না খেয়ে বা মানুষের হাতে মারা পড়ছে। পাখির মধ্যে শালিক ও বুলবুলির সংখ্যাই বেশি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় কৃষক লিমন জানিয়েছেন, ফল রক্ষার জন্য দেয়া জালে আটকা পড়ে পাখি মারা যাওয়া আমাদের জন্য বিপদ। কারণ পাখিরা আমাদের ফসলের ক্ষেতের ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ও পোকামাকড় খেয়ে থাকে। পাখি হত্যা বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
প্রকৃতিপ্রেমী ইলিয়াস হোসেন জানান, ফল বাগানে যেভাবে পাখি হত্যা করা হচ্ছে, এটা অন্যায়। এতে প্রকৃতি ভারসাম্য হারাবে। হুমকিতে পড়বে আমাদের জীববৈচিত্র্য।
উপকূলীয় বন কর্মকর্তা ও উপকূলীয় বন বিভাগ পটুয়াখালী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, বন্যপ্রাণী আইনে ফাঁদ পেতে কোনো প্রাণী হত্যা আইনত অপরাধ। কোনো ব্যক্তি যদি এমন করে পাখি হত্যা করে তা বন্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো।
বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ফলন রক্ষার জন্য কোনো প্রাণী হত্যা করা যাবে না। বন বিভাগ ও ইউএনওদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলে দেয়া হবে। পাখি আমাদের পরিবেশের জন্য উপকারী। এরা ক্ষেত খামারের ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ খেয়ে ফসল রক্ষা করে।