বসত ঘর দখলে নিতে কৌশলে প্রতিবন্ধী বাবা, মা ও বোনকে অন্ধকার ঘরে দুইদিন ধরে তালাবদ্ধ রাখার অভিযোগ উঠেছে প্রবাস ফেরত সন্তানের বিরুদ্ধে।
স্থানীয়রা বিষয়টি পুলিশকে জানালে তালাবদ্ধ অবস্থা থেকে তাদের উদ্ধার করে পুলিশ। এবিষয়ে স্থানীয়রা ক্ষোভ ও অভিযোগ করলেও সন্তানের বিরুদ্ধে বাবা-মা, বোন কোন অভিযোগ করেনি।
সোমবার (২৭ জুন) বিকালে স্থানীয় বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বশিরুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, ২৬ জুন রাতে বরগুনার বামনা উপজেলার পশ্চিম সফিপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত মানিক মিয়া একই উপজেলার বাক প্রতিবন্ধী আমজেদ আলীর ছেলে। প্রায় ৩০ ঘন্টা পর ৯৯৯-এর ফোনে তারা উদ্ধার হয়।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যান ওই এলাকার অধিকাংশ মানুষ। এই সুযোগে বিরোধীয় জমিতে থাকা ভবনের একটি কক্ষ জোরপূর্বক দখলে নেন সদ্য প্রবাস ফেরত মানিক মিয়া। পরে কক্ষটি স্থায়ী দখলের রাখার কৌশল হিসাবে তার প্রতিবন্ধী বাবা, মা ও বোনকে কক্ষের ভিতরে রেখে বাহির থেকে তালাবদ্ধ করে রাখেন। ২ দিন ধরে বৃদ্ধরা সেখানে তালাবদ্ধ অবস্থায় ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, মানিক মিয়া ও তার নিকট আত্মীয় মাদরাসা শিক্ষিকা ফিরোজা বেগম মিলে পশ্চিম সফিপুর ১১ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। মানিক মিয়া তখন প্রবাসে ছিলেন।
মাদরাসা শিক্ষিকা ফিরোজা বেগম জানান, তাদের ক্রয়কৃত জমিতে একটি আধা পাকা ঘর ও একটি দুই কক্ষ বিশিষ্ঠ একতলা ভবন ছিল। একতলা ভবনটিতে ফিরোজা বেগম ও তিন কক্ষের আধা পাকা ঘরটিতে মানিক মিয়া বসবাস করতেন। কিন্তু সম্প্রতি প্রবাস থেকে ফিরে মানিক মিয়া ফিরোজার ভবনের একটি কক্ষ দাবী করেন।
ফিরোজার অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ভবনের ওই কক্ষটি দখলের চেষ্টা করেন মানিক মিয়া। শেষমেশ ২৫ জুন কক্ষটি জোরপূর্বক দখল করেন তিনি। এসময় ভবনের মধ্যে থাকা মালামাল ভাংচুর করে বাইরে ফেলে মানিক। পরে কক্ষটি দখলে রাখাতে বৃদ্ধ প্রতিবন্ধী বাবা-মা ও বোনকে দুইদিন ধরে তালাবদ্ধ করে রাখেন মানিক।
তিনি আরও বলেন, ১০-১২ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে মানিক কক্ষে প্রবেশ করে মালামাল ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। পরে কক্ষের মধ্যে তিনজনকে তালা দিয়ে মানিক চলে যায়। বিষয়টি পুলিশকে জানালে তারা এসে মালামাল বাহিরে ছড়ানো ছিটানো দেখেও তাৎক্ষনিক তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
এবিষয়ে প্রবাসী মানিক মিয়া জানান, আমার বাবা-মাকে আমি কিভাবে রাখবো না রাখবো, তা আমি ভালো বুঝব। তালা দিয়ে না রাখলে ওরা আবার কক্ষে ঢুকবে।
স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী ওবায়দুল কবীর আকন্দ বলেন, বিদ্যুৎ ও পানিবিহীন একটি কক্ষে বৃদ্ধ বাবা-মা ও বোনকে দুইদিন ধরে তালা দিয়ে রাখা ন্যাক্কারজনক।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান চৌধূরী কামরুজ্জামান সগির জানান, উভয় পক্ষ মিলে জমি কিনলেও ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে ঝামেলা ছিলো। বৃদ্ধ বাবা-মা ও বোনকে তালামুক্ত করা হয়েছে।
বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বশিরুল আলম জানান, স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে তালাবদ্ধদের উদ্ধার করা হয়েছে। এবিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।