স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল বিষয়ে অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে সাংবাদিকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও এন্ড কমিউনিকেশন (বিএনএনআরসি) এর উদ্যোগে ও দি এশিয়া ফাউন্ডেশনের সহায়তায় সোমবার (৪ এপ্রিল) শুরু হলো দুইদিন ব্যাপী স্বাস্থ্য-সাংবাদিকতায় মূল ঘটনা যাচাই ও তথ্যের সত্যতা নিরূপণ কৌশল বিষয়ক কর্মশালা।
পিরোজপুরের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এর সভাকক্ষে আয়োজিত দুইদিন ব্যাপী উক্ত কর্মশালায় জাতীয় ও স্থানীয় প্রিন্ট, অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং টেলিভিশন চ্যানেল এ কর্মরত বরিশাল বিভাগের মোট ২৫ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।
কর্মশালার উদ্দেশ্য হলো স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বস্তুনিষ্ঠ, অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন এবং প্রভাব বিস্তারকারী সংবাদ তৈরি, প্রকাশ ও প্রচারে কর্মরত সাংবাদিকদের সক্ষমতা বৃদ্ধি। পাশাপাশি নিরপেক্ষ এবং ভারসাম্যপূর্ণ স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য যাচাই-বাছাই এবং উপস্থাপনে আধুনিক কলাকৌশল বিষয়ক জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন এবং অনুশীলনে সাংবাদিকদের উৎসাহিত করা।
উক্ত কর্মশালায় মূলত বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য বিষয়ক সাংবাদিকতা; সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা; স্বাস্থ্য-প্রতিবেদনে ভুল তথ্য, অপতথ্য ও গুজবের প্রতিরোধ ও মোকাবিলা; স্বাস্থ্য-সাংবাদিকতায় বিশ^স্ত তথ্য সূত্র বা উৎস এবং তথ্য যাচাই এর কৌশল ও মাধ্যমসমূহ; বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তথ্য যাচাইকরণ ও প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য-ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো বিবেচনা করা – ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। কর্মশালার এই বিভিন্ন বিষয়গুলোর ওপর আলোচনা করেন আবু রুশ্দ মো. রুহুল আমীন, সিনিয়র নিউজ এডিটর, বাংলাভিশন। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিএনএনআরসি’র প্রজেক্ট কো-অরডিনেটর ফেলো হিরেন পন্ডিত, সাংবাদিক ও গবেষক ফেলো শফিকুল ইসলাম খোকন প্রমুখ।
কর্মশালার শুরুতে বিএনএনআরসি এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব এএইচএম বজলুর রহমান এই কর্মশালার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, আলোচ্য বিষয়সমূহ তুলে ধরেন। দ্রুত পরিবর্তনশীল বাস্তবতার চ্যালেঞ্জ, এর বহুমুখি প্রভাবের গতি ও সাবলীলতা এবং সুযোগ-সুবিধাসমূহ তুলে ধরেন পাশাপাশি নতুন নতুন বিষয়ে নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বিশেষ অতিথি জনাব আলহাজ্ব মো. হাবিবুর রহমান মালেক, পিরোজপুর পৌরসভার মেয়র উল্লেখ করেন যে, আমরা কভিড-১৯ অত্যন্ত ভালোভাবে মোকাবেলা করতে পেরেছি এবং আমাদের দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আগের তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে এগুলো আপনাদের প্রতিবেদনের মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে এবং দেশের উন্নয়নে সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে।
কর্মশালায় উপস্থিত প্রধান অতিথি জনাব মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান, জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পিরোজপুর; তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন সাংবাদিকৃন্দ সমাজের দর্পণ হিসেবে কাজ করেন। দায়বদ্ধতা এবং দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে সবাইকে কাজ করতে হবে। সংবাদ ভালোভাবে যাচাই-বাচাই করে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো চিন্তা করে রিপোর্ট করা উচিত আমাদের সকলের একসাথে কাজ করা উচিত, প্রতিহিংসার বশবর্তী না হয়ে নিরপেক্ষভাবে সবাইকে কাজ করতে হবে। যে কোন কাজের ভালো ও খারাপ দিক আছে সেগুলো মূল্যায়ন করে কাজ করতে হবে। তাহলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০৩০ সালে মধ্যে এসডিজি অর্জন ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হতে পারব আমরা।
কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জনাব ডা. মো. হাসনাত ইউসুফ জাকী, সিভিল সার্জন, পিরোজপুর। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমাদের সকলের মিসইনফরশেন, জিইনফরমেশন নিয়ে আরো কাজ করতে হবে। একটি গুজব ও মিথ্যা তথ্য আমাদের সব অর্জনকে ম্লান করে দিতে পারে তাই রিপোর্ট করার সময় তথ্যের সত্যতা যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি। ভালো কাজের সফলতার বিষয়গুলো আপনারা যদি তুলে ধরেন তাহলে আমরা উৎসাহিত বোধ করবো।
আশা করা হচ্ছে উক্ত কর্মশালা থেকে সাংবাদিকগণ নিরপেক্ষ এবং ভারসাম্যপূর্ণ স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য যাচাই-এর ক্ষেত্রে আরো বেশি সচেষ্ট এবং সংবেদনশীল হবেন। পাশপাশি প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনে আধুনিক কলা-কৌশল ব্যবহারে উৎসাহী হবেন।
উল্লেখ্য বিএনএনআরসি একটি গণমাধ্যম উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা যা ২০০০ সালে আত্মপ্রকাশ করে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন এনজিও বিষয়ক ব্যুরো থেকে নিবন্ধিত হয়। বিএনএনআরসির কর্মপ্রচেষ্টা হলো বাংলাদেশে গণমাধ্যমের দ্রুত পরিবর্তনশীল বাস্তবতার চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ-সুবিধাসমূহ বিবেচনায় রেখে গণমাধ্যমের জ্ঞানভিত্তিক ও চলমান ইস্যু উভয় বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমের উন্নয়ন।
বিএনএনআরসি নলেজ-ড্রাইভেন মিডিয়া ডেভেলপমেন্ট এর ভূমিকায় আঞ্চলিক, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে কাজ করে থাকে। এটি জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি (ডব্লিউএসআইএস) ও জাতিসংঘের ইকোনোমিক এন্ড সোশ্যাল কাউন্সিল-এর বিশেষ পরামর্শক মর্যাদাপ্রাপ্ত সংস্থা এবং জাতিসংঘের ডব্লিউএসআইএস পুরস্কার- ২০১৬, ২০১৭, ২০১৯, ২০২০ এবং ২০২১ এর বিজয়ী এবং চ্যাম্পিয়ন।