আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। ১৯৭১ সালের এদিনে ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠতম ভাষণ দিয়েছিলেন।
ঐতিহাসিক এ ভাষণের পরই শুরু হয়েছিল বাঙালি জাতির স্বাধীনতার প্রস্তুতি পর্ব।
লক্ষ লক্ষ মানুষের গগনবিদারী শ্লোগান আর স্বাধীনতার ধ্বনি তরঙ্গের মাঝে বঙ্গবন্ধু মাত্র ১৮ মিনিট ভাষণ দেন। সেখানে তিনি তৎকালীন পাকিস্তানের শাসনতান্ত্রিক সংকট তুলে ধরার পাশাপাশি বাঙালির অধিকার ও মুক্তির দিকনির্দেশনা দেন।
ভাষণের শেষ পর্যায়ে ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’ ঘোষণা দিয়ে তিনি মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূচনা করেন।
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক এ ভাষণের একটি প্রেক্ষাপট রয়েছে। ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানের তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে বিলম্ব করতে থাকে।
তাদের উদ্দেশ্য ছিল, যেকোনোভাবে ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানিদের হাতে কুক্ষিগত করে রাখা। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদ অধিবেশন আহ্বান করেন। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে ১ মার্চ এই অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি ঘোষণা করা হয়। এতে করে জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।
আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ মার্চ সারাদেশে একযোগে হরতাল পালিত হয়। তিনি ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় সমগ্র পূর্ব বাংলায় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
এই পটভূমিতেই ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় বিপুলসংখ্যক লোক একত্রিত হয়; পুরো ময়দান পরিণত হয় এক জনসমুদ্রে। সেখানেই সার্বিকভাবে সমগ্র জাতির উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষণটি প্রদান করেন।
ভাষণে তিনি শুরুতেই বলেন, আপনারা সবকিছু জানেন এবং বোঝেন। সারাদেশের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে তিনি সবাইকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অন্যায় অবিচার ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। একই সাথে বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না। আমি বাংলার মানুষের মুক্তি চাই। বলেন, আর যদি একটি গুলি চলে, তোমরা সবকিছু বন্ধ করে দেবে। তোমাদের যার কাছে যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলো। স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের চূড়ান্ত ঘোষণা দিয়ে তিনি তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।
বঙ্গবন্ধু এ ঐতিহাসিক ভাষণ বিকেল ২টা ৪৫ মিনিটে শুরু করেন এবং বিকেল ৩টা ৩ মিনিটে শেষ করেন। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কো এই ভাষণকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
পাকিস্তান সরকার ৭ মার্চ ১৯৭১ সালে রেডিও ও টেলিভিশনের মাধ্যমে ভাষণটি প্রচার করার অনুমতি দেয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের বাঙালি কর্মকর্তারা ঝুঁকি নিয়ে এই ভাষণ রেকর্ড করেন। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণটিকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
দিনটির তাৎপর্য তুলে ধরে আজ বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে। সংবাদপত্রে প্রকাশ করা হবে ক্রোড়পত্র ও বিশেষ নিবন্ধ। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এ উপলক্ষে পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।