সিডর পরবর্তী সময়ে নদী ও সমুদ্রবেষ্টিত বরগুনায় নৌ-পথে রোগী বহনের জন্য একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স প্রদান করে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। একযুগের বেশী সময় অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত একজন রোগীও বহন করেনি নৌ এম্বুলেন্স। ফলে সরকারের বিপুল অঙ্কের টাকা জলে ভেসেই গচ্ছা, আর অযতœ-অবহেলায় নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি এখন নিঃশেষের পথে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় বরগুনা সূত্রের তথ্যমতে প্রলংঙ্করি ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ২০০৮ সালে নৌপথে রোগী পরিবহনের জন্য বরগুনায় ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় একটি নৌ অ্যাম্বুলেন্স কিনে দেন। এতে ব্যায় ২২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কিন্ত এখনো পর্যন্ত একজন রোগীও বহন করেনি নৌ অ্যাম্বুলেন্স।দীর্ঘদিন এটির খাকদোন নদীর চরে ফেলে রাখার পর এই চরে থেকে দিনে দিনে অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে গিয়েছে।
বর্তমানে নৌ অ্যম্বুলেন্সের ঠিকানা হয়েছে জেনারেল হাসপাতলের পুরনো ভবনের পুর্বপাশে পরিত্যক্ত স্থানে। সরেজমিনে সোমবার দুপুরে দেখা যায়, জেনারেল হাসপাতালের পেছনে ফেলে রাখা হয়েছে নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি। শুধুমাত্র অবকাঠামো টিকে আছে। ভেতরের মেশিনাদি বা যন্ত্রপাতি কিছু নেই। শুন্যলতা আর আগাছায় ছেয়ে আছে ২২ লাখ সেই অ্যম্বুলেন্স।
নৌ অ্যম্বুলেন্সটির চালক আবদুর রহমান বলেন, আমি এখনো পর্যন্ত এটিতে কোনো রোগী পরিবহন করিনি। বরগুনা থেকে বরিশাল যাওয়া আসায় জ¦ালানীসহ ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। কারণ রোগীদের কেউ এর খরচা বহন করে আসতে চায়না। জ¦ালানী খরচ অনেক। এর অর্ধেকেরও কম খরচে সড়কপথে রোগী আনা নেয়া করা যায়। সে কারণে এটি অচল হয়ে পড়ে আছে।
হাসপাতালের ভান্ডার সংরক্ষক জসীম উদ্দীন বলেন, নৌ অ্যম্বুলেন্সের দুটো ইঞ্জিন ভালো অবস্থায়ই ভান্ডারে সংরক্ষিত আছে। এটির অবকাঠামো নষ্ট হয়ে আছে। আমি ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে এটি গ্রহন করার পর থেকে একটিও ট্রিপ দেয়া হয়নি।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের সাথে কোন প্রকার আলোচনা না করেই একপ্রকার চাপিযয়ে দেয়া হয়েছিল নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি। বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক সোহরাব উদ্দীন বলেন, উপকূলীয় জেলা বিবেচনায় নৌপথে রোগীদের সেবার জন্য নৌ অ্যম্বুলেন্সটি দেয়া হয়েছিল। কিন্ত খরচার কারণে রোগীরা নৌ অ্যম্বুলেন্সে যাতায়ত না করায় অচল হয়ে পড়ে থেকে নষ্ট হয়েছে।
অপরিকল্পিত ভাবে নৌ-অ্যাম্বুলেন্স প্রদান করায় রাষ্ট্রের টাকা অপচয় হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ আব্দুল রব ফকির বলেন, অপরিকল্পিত ও অবিবেচনাপ্রসূত সিন্ধান্তের কারণে রাষ্ট্রের অর্থ নষ্ট হয়ে যাওয়া দুঃখজনক। এই নৌ অ্যাম্বুলেন্স দেয়ার আগে খরচের বিবেচনা করা উচিত ছিল। সেটি করা হয়নি, যার ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল এটি ব্যবহাওে ব্যপক প্রচারণা ও সঠিক ব্যবস্থাপনা। কিন্ত সেখানেও উদাসিনতা ছিল।
বরগুনার সিভিল সার্জন মোঃ ফজলুল হক বলেন, বেশ কয়েকবছর আগে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি নদী থেকে তুলে এনে রাখা হয়েছে বরগুনা সদর হাসপাতালের মধ্যে। যা এখন আর মেরামতের উপযোগীও নেই। এটি কি করা যায় আমরা বসে পরামর্শ করে সিন্ধান্ত নেব।