বামনাার বুকাবুনিয়া ইউনিয়নের লতাবুনিয়া বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্বাচিত সদস্যদের একটি কক্ষে আটকে রেখে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে জোড়পূর্বক তাদের মতের বিরুদ্ধে স্বাক্ষর নিয়ে সভাপতি পদে একজন প্রভাবশালীকে নির্বাচিত করার অভিযোগ করেন নবনির্বাচিত সকল সদস্যরা। এ ঘটনায় নির্বাচিত সদস্যরা বরিশাল শিক্ষাবোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে জানাগেছে, লতাবুনিয়া বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ১২ ডিসেম্বর। নির্বাচনে অবিভাবক সদস্য পদে মো. ফকরুল ইসলাম, এ ছালাম আকন, যশোমন্ত রায়, ছায়িফা ও পারভিন আক্তার নির্বাচিত হন। নির্বাচিত সদস্যদের ভোটে ওই মাসের ২২ তারিখের মধ্যে সভাপতি পদে নির্বাচন হওয়ার বিধান থাকলেও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদ হোসেন ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কর্মকর্তা উপজেলা একাডেমীক সুপারভাইজারকে ভুল বুঝিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে নিষেধ করেন। পরে নবনির্বাচিত সদস্যরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট গেলে তিনি নির্বাচনী কর্মকর্তাকে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশ দেন। সদস্যরা ইউএনও’র কাছ থেকে একাডেমীক সুপারভাইজারের অফিসে গেলে সেখানে কয়েকজন প্রভাবশালী নেতারা স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রভাব দেখিয়ে ওই নব নির্বাচিত সদস্যদের একটি কক্ষে আটকিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে সভাপতি পদে মনিরুল ইসলাম সেন্টু এর নাম অর্ন্তভ‚ক্ত করে রেজুলেশনে স্বাক্ষর নেয়।
এ ঘটনায় নির্বাচিত সদস্যরা বরিশাল শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দপ্তরে বিচার ও সভাপতিপদে নির্বাচিত ব্যক্তির নাম বাতিল চেয়ে লিখিত আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে বোর্ড কর্তৃপক্ষ রাজাপুর সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম বারী খান কে প্রধান করে একটি তদন্তটীম গঠন করেন।
অভিযোগে আরো জানাগেছে, গত ৫ ফেব্রæয়ারী ওই তদন্তটীম লতাবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আসেন। এসময় স্থানীয় সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন ওই বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের চলে যেতে বলেন এবং সাবেক আহবায়ক ফারুক হোসেন মোল্লাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বিদ্যালয় কক্ষ থেকে বেড় করে দেন।
এব্যাপারে ফারুক হোসেন মোল্লা বলেন, ২২ তারিখ সভাপতি পদে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু নির্বাচন কর্মকর্তা একাডেমীক সুপারভাইজার সাহেব বিদ্যালয়ে আসেনি। নবনির্বাচিত সদস্যরা পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করার পর আমরা সবাই নির্বাচন কর্মকর্তার কক্ষে যাই। সেখানে উপজেলা আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের কতিপয় নেতারা তাকে সহ সবাইকে রুম থেকে বেড় কওে দেয়। শুধুমাত্র নির্বাচিত সদস্যদেও সেখানে জোড়পূর্বক আটকে রাখে। পরে ওই সদস্যদের কাছে থেকে মনিরুল ইসলাম সেন্টুকে সভাপতি নির্বাচিত করে স্বাক্ষর রাখেন। সদস্যদের মতের বিরুদ্ধে সভাপতি নির্বাচিত করায় তারা বরিশাল শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানের বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেন। ওই অভিযোগ পেয়ে বোর্ড কর্তৃপক্ষ একটি তদন্তটীম গঠন কওে পাঠায়। তদন্তটীম আসলে স্থানীয় সংসদ সদস্যও ঘটনাস্থলে পৌছে তাকে অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করেন।
নবনির্বাচিত সদস্য পারভীন বেগম বলেন, সভাপতি নির্বাচনের শেষ দিনে নির্বাচনের দ্বায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাকে ফোন করলে তিনি বরিশালে রয়েছেন বলে তাদেরকে জানায়। পরে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে গেলে তারা সেখানে তাকে দেখতে পায়। ইউএনওর আশ্বাসে আমরা তার অফিসে গেলে সেখানে সন্ত্রাসী ষ্ট্যাইলে কিছু লোকজন প্রবেশ কওে সবাইকে বের কওে দেয়। শুধুমাত্র সদস্যদেও রেখে তাদেরকে ভয়ভীতি দেখায়। তারা বলেন এমপি সাহেব চাচ্ছে সেন্টু ভাই সভাপতি হউক। আপনার সবাই স্বাক্ষর করেন। এরপর আমরা বাধ্য হই স্বাক্ষর দিতে।
লতাবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফারুক হোসেন বলেন, এমপি সাহেব চায় মনিরুল ইসলাম সেন্টু মিয়া সভাপতি হউক অথচ নির্বাচিত সদস্যরা চায় অন্য একজন জমিদাতাকে। এনিয়ে সদস্যরা বোর্ডে একটি অভিযোগ দিয়েছেন। সেটার তদন্ত গত ৫ ফেব্রæয়ারী শেষ হয়েছে।
নির্বাচনী কর্মকর্তা ও উপজেলা একাডেমীক সুপারভাইজার মো. নাসিমুল হক বলেন, লতাবুনিয়া স্কুলে শক্তিশালি দুটি পক্ষ থাকায় নিরাপত্তার কারণে আমি গত ২২ তারিখে সেখানে যাইনি। পরে সদস্যরা আমার অফিসে আসলে স্থানীয়দের সহায়তায় সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। পরে একটি পক্ষ বোর্ডে ওই কমিটি বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। যার তদন্ত ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিবেক সরকার বলেন, বরিশাল শিক্ষা বোর্ড থেকে একটি তদন্তটীম এসে তদন্ত করে গেছেন। তারা কেউ আমাকে বিষয়টি অবহিত করেন নি। হয়তো অল্পদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যাবে।