রুদ্র রুহান, বরগুনাঃ প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে বরগুনার ভাড়ানী খাল পুনঃখনন হলেও গলার কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছে ১১ সেতু। বিভিন্ন সময়ে অনেকটা অপরিকল্পিতভাবেই এসব সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতুর পিলারের ভিত টিকিয়ে রাখতে এর আশপাশের মাটি খনন করা হয়নি। ফলে নৌযান চলাচলের ক্ষেত্রে এই সেতুগুলো একপ্রকার প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাড়িয়েছে। এতে খননের সুফল আসবেনা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভাড়ানী খাল দখলমুক্ত করতে পরিবেশবাদী ও সামাজিক যেসব সংগঠন আন্দোলন করেছিলেন সেই সংগঠনের নেতারাও বলছেন, সেতুগুলো ভেঙে পুনঃনির্মাণ করতে হবে। তা না হলে এই খাল খননের সুফল ভোগ করতে পারবেনা এলাকাবাসী।
পাউবো বরগুনা কার্যালয়ের তথ্যমতে, মাছবাজার এলাকা থেকে খাকদোন নদের একটি ভাড়ানী খাল নামে পৌরশহরের মাদরাসা সড়ক হয়ে ও বুড়িরচর ইউনিয়নের মধ্যদিয়ে দক্ষিণে নয় কিলোমিটার গিয়ে পায়রা নদে যুক্ত হয়েছে।
প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে বরগুনার ভাড়ানী খাল পুনঃখনন হলেও গলার কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছে ১১ সেতু। বিভিন্ন সময়ে অনেকটা অপরিকল্পিতভাবেই এসব সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতুর পিলারের ভিত টিকিয়ে রাখতে এর আশপাশের মাটি খনন করা হয়নি। ফলে নৌযান চলাচলের ক্ষেত্রে এই সেতুগুলো একপ্রকার প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাড়িয়েছে। এতে খননের সুফল আসবেনা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এলজিইডি, বরগুনা পৌরসভা, বুড়িরচর ইউনিয়ন পরিষদ ও জেলা পরিষদ নয় কিলোমিটারে মোট ১১টি ব্রীজ নির্মাণ করে। এর মধ্যে বরগুনা মাছ বাজার থেকে দক্ষিণে এক কিলোমিটার এলাকায় সাতটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। এসব ব্রীজের থেকে অন্যটির দূরত্ব ৩০ থেকে ১০০ গজ মাত্র। এছাড়া বাঁশবুনিয়া থেকে কালিরতবক হয়ে গুলবুনিয়া পায়রা নদের মোহনা পর্যন্ত আরো চারটি ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে।
স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা বলছেন, সেতুগুলো এমন অপরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়েছে যে বর্ষা মৌসুমে যেকোনো ছোট-বড় কোনো নৌ-যানই সেতুগুলোর নিচ দিয়ে যাতায়ত করতে পারেনা। পাবলিক পলিসি ফোরাম বরগুনা জেলার আহবায়ক হাসান ঝন্টু বলেন, অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত এগারটি সেতু বহাল তবিয়তে রাখা হয়েছে। এই সেতুগুলোর ভেঙে পরিকল্পিতভাবে পুননির্মাণ না করা হলে এখাল কখনোই প্রাণ খুঁজে পাবেনা। কারণ, সেতুর পিলারের স্থান খনন না করায় পানির প্রবাহ বাঁধার সৃষ্টি হবে। এতে আবারো পলি পড়ে ভরাট হবে খালটি। আন্দোলন সংগ্রামের পর সেতু দখলমুক্ত ও কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে খনন হলেও এখন সেতু ভেঙে পরিকল্পিতভাবে নির্মাণ না করলে এর কোনো সুফল আসবেনা।
বরগুনা নাগরিক অধিকার সংরক্ষন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন কামাল বলেন, ‘আমরা এই খাল দখলমুক্ত করতে আন্দোলন করেছিলাম। সেটি এখন দখলমুক্ত ও প্রশস্ত একটি খালে পরিণত হতে চলেছে। এখন ১১টি সেতু যে অবস্থায় দাড়িয়ে আছে সেটি একপ্রকার গলার কাটা। এসব সেতু ভেঙে অপসরাণ করে গুরুত্ব বিবেচনায় পরিকল্পিতভাবে নতুন সেতু নির্মাণ করতে হবে, যাতে খালের পানির প্রবাহ ও নৌযান অবাধে চলাচল করতে পারে।
পাউবো বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী কাইছার আলম বলেন, আমরা খাল খনন করেছি। সেতুগুলো ভিত নড়বড়ে যাতে না হয় সে কারণে সেতুর পিলারের আশপাশ খনন করা হয়নি। তবে এই সেতুগুলোর কারণে জোয়ার-ভাটার প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হবে। এতে খননের পুরোপুরি সুফল আসতে সমস্যা হবে।’
বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন,‘খালটি দখলমুক্ত করতে আমরা আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়েছি। সেতুগুলো বিষয়ে কি করা যায় এটি আমরা পাউবো, এলজিইডি,পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় নাগরিকদের নিয়ে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করব।