বরগুনার বামনা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে তিন ফসলী জমির মাটি অসাধু ব্যবসায়িরা অধিক মুনাফার লোভে ইটবাটা মালিকের কাছে বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কৃষিজমি নষ্ট করে মাছের চাষ করার নামে এক্সেভেটর(ভেকু) দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করছে মাটি খেকোরা।
উপজেলা প্রশাসনের কোন পদক্ষেপ না থাকার কারণে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন এসব ব্যবসায়ীরা। এতে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য, পুকুর ও ঘের খননের নামে সংকুচিত হচ্ছে ফসলি জমি।
আজ শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারী) সকালে উপজেলা সদরের আমতলী গ্রামে গিয়ে দেখাগেছে, আলম হাওলাদারের মালিকানাধীন ফসলি জমির মাটি গত ১০-১৫ দিন ধরে এক্সেভেটর(ভেকু) দিয়ে গভীর গর্ত করে ট্রাকে তোলা হচ্ছে। সেই মাটি উপজেলা পরিষদের সামনের সড়ক দিয়ে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ইটের বাটায়।
সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জুয়েল হাওলাদারের ফসলি জমিতে মাছের ঘের করার নামে ১০-১২ ফুট গভীর করে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটায়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ট্রাকে করে এসব মাটি নেয়া হচ্ছে ভাটায়। এর ফলে পার্শ্ববর্তী ফসলী জমি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিতে কথিত ঘেরের পাড় ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন পার্শ্ববর্তী জমির মালিকরা।
শুধু আমতলী গ্রামেই নয় একই ইউনিয়নের চেঁচান গ্রামের তিন ফসলের জমির টপ সয়েল নগদ লাভের আশায় বিক্রি করে দিচ্ছে দরিদ্র কৃষকরা।
এদিকে, উপজেলার রামনা ইউনিয়নের ঘোলাঘাটা গ্রামের রামনা ডৌয়াতলা সড়কের পাশে মো. মগফের আলীর ফসলি জমি থেকে গত ১০ দিনেরও অধিক সময় ধরে মাটি কাটা হচ্ছে। এছাড়া রামনা শরীফ বাড়ী সংলগ্ন বেড়ী বাধের কোল ঘেঁষে নদীর তীরের মাটি ভেকু দিয়ে কেটে নিয়ে যাচ্ছে জনৈক ইটভাটার মালিক। বেপরোয়াভাবে চলাচলকারী মাটি টানার টলি ও ট্রাকের চাপে রাস্তা ঘাট ও ওয়াপদা বেড়ীবাধের অবস্থা বেহাল।
ডৌয়াতলা ইউনিয়নের দক্ষিন কাকচিড়া গ্রামের ফসলি জমিতে পুকুর কেটে মাটি বিক্রি করতে দেখা গেছে।
অপর দিকে উপজেলার বুকাবুনিয়া ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুরা ভেড়ী বাধের কোল ঘেঁষে এক্সেভেটর(ভেকু) দিয়ে মাটি কেটে আর এন বি নামে একটি নতুন ইটভাটায় মাটির স্তূপ গড়ে তুলেছেন ভাটার মালিক।
রামনা আলোকিত যুবসমাজ সংগঠনের সভাপতি ফোরকান মাহমুদ বলেন, বামনা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ফসলি জমি সহ, বিষ খালি নদীর পাড়ের চরের মাটি প্রতিনিয়ত কেটে নিচ্ছে প্রভাবশালী ভাটা মালিকরা। ফলে হুমকির মুখে পরছে বিষখালী নদীর বেরিবাধ সহ কৃষকেরা।
উপজেলা সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক রতন মালাকর জানান, জেলা প্রশাসক মহোদয় বিভিন্ন সভা সেমিনারে বলেছেন, কারো এক টুকরো জমিও যেন পতিত পড়ে না থাকে। এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বিভিন্ন সময় তার বক্তব্যে জমি পতিত ফেলে না রাখতে বলেন। কিন্তু জমির মালিকেরা টাকার লোভে মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। আর মাটি খেকোরা ফসলি জমির মাটি কিনে ভাটায় বিক্রি করছেন। এ অবস্থা কোনভাবেই কাম্য নয়।
এ ব্যাপারে বামনা প্রেসক্লাবের সভাপতি নেছার উদ্দিন বলেন, বেআইনি কাজ বন্ধের দায়িত্ব প্রশাসনের। তিনি এই প্রতিনিধিকে প্রশ্ন রেখে বলেন, বেড়ায় যদি গাছ খেয়ে ফেলে তবে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? তিনি আরো বলেন, অবৈধ কাজ বন্ধের পরিবর্তে প্রশাসন যদি দেখেও না দেখার ভান করে তবে আমরা কি করবো?
এ ব্যাপারে বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অন্তরা হালদার বলেন, একটি ভাটায় অভিযান পরিচালনা করেছি। ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা বন্ধে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা বন্ধে জনপ্রতিনিধিদেরও একটা ভূমিকা পালন করা উচিত।