সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে হরহামেশাই ঝড়ের কবলে পড়তে হয় জেলেদের। আর এতে ঘটে প্রানহানি, নষ্ট হয় সম্পদ। মাছ তো নয়, বরং প্রান নিয়ে বেঁচে ফেরাই এখন জেলেদের সংশয়। এ অবস্থার উত্তরণে উপায় খুঁজছেন জেলেরা। সমুদ্রগামী জেলেদের কেউ কেউ মনে করছেন, তাদের কাছে যথাসময়ে ঝড়ের সংকেত পৌঁছায়না, এ কারণেই ঘটে এমন দূর্ঘটনা। আবার অনেকে বলছেন, সংকেত ছাড়াই আকষ্মিক ঝড় আসে, এসময় সংকে পাওয়ার চেয়েও জরুরি জীবন রক্ষার উপায় বের করা। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলেদের নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। আর মৎস্য বিভাগের দাবি, নিরাপত্তার জন্য জেলে ও ট্রলার-মালিকদের সচেতন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ফিসিং বোট এসোসিয়েশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরি বলেন, সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে ঝড়ের কবলে ট্রলারডুবি ঘটনা চিরায়াত। তিনি বলেন, প্রতিবছরই গড়পড়তা অর্ধশতাধিক জেলে প্রাকৃতিক দূর্যোগ কবলিত হয়ে মারা যান। এই মৃত্যুকে মেনেই তারা সাগরে ইলিশ শিকার করতে যান। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অগভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করা ছোট ট্রলারগুলো ঝড়ের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও জেলেদের প্রানহানীর ঘটনা ঘটছে। উপকূলের কাছাকাছি মাছ শিকার করা ট্রলারের জেলেরা বলছেন, সংকেতের চেয়েও তাদের জন্য জরুরি তাৎক্ষনিক জীবন রক্ষার উপায়।
বঙ্গোপসাগরে ট্রলারে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন পাথরঘাটা সদর উপজেলার হরিণঘাটা এলাকার জেলে নুরুল আলম। তিনি মূলত বঙ্গোপসাগরের মোহনায় মাছ শিকার করেন। নুরুল আলম বলেন, মোগো এইহানে কয়েকজ হাজার বোট আছে মোরা হেইয়া লইয়া সাগরের মোহনায় মাছ ধরি। এহানে ফোনে নেটওয়ারও (মুঠোফোন নেটওয়ার্ক) থাহে। মোগো বোটগুলা ছোড, ৬-৭ জন জাইল্লা এই বোডে মাছ ধরি। আচুক্ক বইন্যা ছোডলে ট্রলার উইল্ডা যায়, তহন মোরা ট্রলার ধইরা ভাইস্যা থাহি, নাইলে কন্টিনার ফ্লট তক্তা এইসব ধইর্যা হাতরাই (সাঁতার দেন)। এইসময় যদি মোগো কেউ তারাতারি উদ্ধার করতে পারে তয় কেউ মইর্যা যায়না।

বরগুনা জেলা জেলে সমিতি সভাপতি দুলাল মাঝী। ঝড়ে জেলেদের মৃত্যু ও ক্ষয়-ক্ষতি নিয়ে কথা বলেন দুলাল মাঝী। তিনি বলেন, উপকূলীয় এলাকায় মুলত বঙ্গোপসাগর কেন্দ্রিক দুই শ্রেণির জেলে মাছ শিকার করেন। এদের মধ্যে একদল গভীরসমুদ্রগামী ও বাকিরা প্রান্তিক। প্রান্তিক জেলেরা মূলত নদী ও সাগরের মোহনায় ছোট নৌকায় মাছ শিকার করেন। এক একটি ট্রলারে ৬থেকে ১০জন জেলে থাকেন, তারা সমুদ্রতীরবর্তি এলাকায় মাছ শিকার করেন।
সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট, ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ এর সহকারী অধ্যাপক ড. রুমানা সুলতানা উপকূলীয় জেলেদের জীবন ও নিরাপত্তা নিয়ে গবেষণা করেছেন। ড. রুমানা বলেন, প্রাকৃতিক দূর্যোগের শিকার হয়ে জেলেদের প্রান ও সম্পদহানীর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সরকারের বিবেচনা করতে হবে।
একইসাথে ট্রলার মালিক ও জেলেদেরও সচেতন করতে হবে। বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করা জেলেদের ঝড় থেকে বাঁচাতে প্রাথমিকভাবে যে কোনোভাবেই হোক, গভীর সমুদ্রে সরকারের উদ্যোগ নিয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে হবে, অথবা বার্তা পৌছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আর প্রান্তিক জেলেদের বাঁচাতে তাদেরকে জীবন রক্ষা সরঞ্জামাদি সরবরাহ ও ব্যবহার নিশ্চিতে কাজ করতে হবে সরকারের। এছাড়া দ্রুত সংকেত পৌঁছানোর কি কি উপায় আছে বের করে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। আমি মনে করি, এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি গুরুত্ব বিবেচনায় পদক্ষেপ নেয়া।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, জেলেদের প্রশিক্ষণ, লাইফ জ্যাকেট, বয়াসহ অন্যান্য জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য মালিকদের বাধ্য করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সবাইকে বুঝিয়েও বলা হয়েছে কিন্তু কেউ এসবে ভ্রুক্ষেপ করেন না। এ ক্ষেত্রে আমি বলব জেলেরাও সচেতন নন। তবে আমরা বিভিন্নভাবে বোট মালিকদের সচেতন করতে চেষ্টা করছি। আর গভীর ও অগভীর সমুদ্রে ঝড়ের পূর্বাভাস পৌঁছানোর জন্য কি উপায় বের করা যায় এ নিয়ে আমি উর্ধতনদের সাথে গুরুত্বসহকারে আলাপ করব।