বরগুনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে দাফনের কাপড় পড়ে পৈত্রিক সম্পত্তি ফিরে পেতে অনশন করা তিন বোন পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিকের হস্তক্ষেপে ফিরে পেয়েছে পৈত্রিক সম্পত্তি ও পুলিশ সুপারের দেওয়া একখানা নতুন ঘর। একই সঙ্গে তিন বোনের পড়াশুনার ব্যয় বহন করবেন পুলিশ সুপার। এমন উদ্যোগে প্রশংসায় ভাসছেন পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক। এর আগে দীর্ঘ ৬ ঘন্টা পরে বুধবার বিকালে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিকের আশ্বাসে অনশন ভাঙ্গেন তিন বোন।
জানা যায়, বুধবার বেলা ১০টার দিকে বরগুনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে পৈত্রিক সম্পত্তি ফিরে পাবার জন্য অনশনে বসেন তিন বোন। বেলা ৪ টার দিকে বরগুনার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক খাবার নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাসে অনশন ভাঙেন ওই তিন বোন।
অনশনে বসা তিন বোন রুবি আক্তার (২৭), জেসমিন আক্তার (১৮) ও মোসা. রোজিনা (১৬)। তাঁরা বরগুনা জেলার বামনার গোলাঘাটা গ্রামের মৃত আবদুল রশীদের মেয়ে।
পুলিশ সুপার বুধবার বিকালে উপস্থিত হন বামনা উপজেলার রামনা ইউনিয়নে গোলাঘাটা গ্রামে তিন বোনের বাড়ীতে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বামনা উপজেলা চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটু, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিবেক সরকার, বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বশিরুল আলম ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। পুলিশ সুপার কাগজপত্র দেখে এতিম তিন বোনের পৈত্রিক সম্পত্তি দখলদার আবদুল মান্নান, আশরাফ আলী, শাহজাহান ও সামসুজ্জামানের দখল থেকে ফিরিয়ে দেন। একই সঙ্গে পুলিশ সুপার এতিম তিন বোনকে একটি নতুন ঘর পড়াশুনা চিকিৎসা ও খাবারের ব্যয়ভার বহন করার আশ্বাস দিয়েছেন।
বড় বোন রুবি আক্তার বলেন, মা বাবা মারা যাওয়ার এক বছর পর চট্টগ্রাম চলে যাই আমরা। সেখানে পোশাক কারখানায় আমি কাজ করে দুই বোনকে পড়ালেখা করাই। দুই বোনের নিরাপত্তার জন্য দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে পড়াশোনা চালিয়ে যাই। ২০১৯ সালে আমরা বাড়ি ফিরে দেখি আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি দখল করে নিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালী প্রতিবেশী আবদুল মান্নান, আশরাফ আলী, শাহজাহান ও সামসুজ্জামান। অনেক চেস্টা করেও আমাদের সম্পত্তি উদ্ধার করতে পারিনি। কোন উপয় না পেয়ে আমরা অনশনে বসার পর পুলিশ সুপার আমাদের অনশন ভাঙ্গিয়েছেন। তিনি আমাদের বাড়ী এসে সব কিছু দেখে আমাদের জমি বুঝিয়ে দিয়েছেন। আমাদের থাকার মত কোন ঘর নেই। তিনি আমাদের একটি ঘর বোনদের পড়াশুনা চিকিৎসা ও খাবারের ব্যবস্থা করে দিবেন। পুলিশ সুপারের এমন উদ্যোগকে আমরা মহা খুশি। জমি দখল প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলে আবদুল মান্নান বলেন, তিন বোনের জমি ১৩ শতাংশ। তাদের জমি আমরা ভোগ দখল করিনা। আমাদের জমি আমাদের দখলে। বামনা উপজেলা চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটু বলেন, তিন বোনের জমি তারা আগেই বুঝে পেয়েছে। তবে ওদের থাকার মত কোন ঘর ছিল না। পুলিশ সুপার ঘর দেওয়ার কথা বলেছেন।
পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক বলেন, বিষয়টি মানবিক বিবেচনায় নিয়েছি। তাঁদের (তিন বোনের) মা-বাবা, ভাই কেউ বেঁচে নেই। আশ্রয়ের জমিটুকুও যদি বেহাত হয়ে থাকে, তবে সেটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখতে পাই ওদের থাকার মত কোন বসত ঘর নেই। ভাঙ্গাচোরা একটি ঘর আছে। বসবাসের উপযোগি নয়। আমি একটি বসত ঘর নির্মান করে দেব এবং ওদের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করার কথা বলেছি। তিনি আবারও বলেন মাননীয় প্রধান মন্ত্রী মানবিক দিক বিবেচনা করেন। আমরাও অসহায় মানুষের পাশে থাকব। তিন বোনের মা বাবা ভাই নেই। থাকার বসত ঘর নেই। মানবিক কারনে তাদের পাশে দাড়িয়েছি। ওদের জমি এখন থেকে ওরা ভোগ করবে।