পেশাগত অসদাচারণ, নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতি থেকে অ্যাড. মনিরুল ইসলাম মনিরের সদস্যপদ সাময়িকভাবে স্থগিতকরণ করা হয়েছে।
বুধবার জেলা আইনজীবী সমিতি কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভায় তার সদস্যপদ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।
বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, অ্যাড. মনিরুল ইসলাম মনির জিআর ২৯/২০১৭ (বেতাগী) মামলায় পেশাগত অসদাচরণের জন্য মামলার বাদী মোসা: কুলসুম এর দায়েরকৃত অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ভিজিলান্স কমিশন সর্বসম্মত সিদ্ধান্তক্রমে ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে ৪৫ দিনের জন্য তার সদস্যপদ সাময়িক স্থগিতকরনের শাস্তি প্রদান করার জন্য সুপারিশ করে। যা কার্যনির্বাহী কমিটির পরবর্তী সভায় গ্রহণপূর্বক তার সদস্যপদ ৪৫ দিনের জন্য সাময়িক স্থগিত থাকাকে শাস্তি হিসেবে প্রদান করা হয়। বরগুনা আইনজীবী সমিতির সদস্য মোঃ জাফর ইকবাল অভিযুক্ত অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলামের সদস্যপদ বাতিলের জন্য গঠনতন্ত্রের ১৩ (ঘ)ধারা মোতাবেক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য দরখাস্ত দাখিল করেন। অ্যাড. মনিরুল ইসলাম মনির শাস্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে ৩/২০১৮ নং আপিল দায়ের করেছেন মর্মে বরগুনা আইনজীবী সমিতিকে অবহিত করা হলে আইনজীবী সমিতি ৫ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে সাধারণ সভায় ০৩/২০১২ নিষ্পত্তি সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়।
দীর্ঘ সাড়ে তিন বছরের অধিক সময় ধরে ৩/১৮ নং আপীলের কোন প্রমাণাদি বরগুনা আইনজীবী সমিতিতে জমা না দেয়ায় আইনজীবী সমিতির সদস্য মোঃ জাফর ইকবাল ০৩ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে সভাপতি /সম্পাদক বরাবর দরখাস্ত দায়ের করে ইতিপূর্বে দরখাস্ত মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রার্থনা করে।
অ্যাড. মনিরুল ইসলাম মনিরের বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না এই মর্মে জেলা আইনজীবী সমিতি কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করলে তিনি ১৫ দিনের মধ্যে কোন জবাব না দিয়ে দুই দিনের মধ্যে ৩০ দিনের সময় প্রার্থনা করেন।
অ্যাড. মনিরুল ইসলাম মনির ২১ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে লিখিত জবাবের সাথে সংযোজন না করা এবং কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য থাকাকালীন পেশাগত অসাধারণ এর জন্য শাস্তি ভোগ করার কারণে জেলা আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্রের ১৩ (ঘ)ধারা মোতাবেক আপিলের শাস্তি প্রদানের আদেশ স্থগিত না করা পর্যন্ত বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য পদ স্থগিত করা হয়েছে।
জানা গেছে, এড. মনিরুল ইসলাম মনিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, মামলার হাজতে আসামিপক্ষের জামিন শুনানির করার সময় আসামির জীবিত পিতার নামে মিথ্যের মৃত্যু সনদ পত্র দাখিল করে হাজতী আসামির জামিন করিয়েছেন। তার নামে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ট্রাইবুনাল-৭ এ অভিযোগ কেস নং ৪/২০২০ এবং অভিযোগ ফাইল নং ১৬/২০১৮ মামলা চলমান রয়েছে। ফৌজদারি আপিল ১০৪/২০২০ নং মামলার বাদী রেসপনডেন্ট রুনু বেগমের আপিল মামলায় আসামি/আপিলকারী জমা প্রদানকৃত ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা আত্মসাতের বিষয়ে বরগুনা আইনজীবী সমিতির সভাপতি বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন। যা কমিটিতে তদন্তাধীন রয়েছে।
জিআর ০৯/২০১৩ (বেতাগী) মামলায় বাদী পক্ষ ও আসামিপক্ষের উভয় পক্ষে মামলা পরিচালনা করে আসছে থাকলে সে বিষয়ে বর্তমানে বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতির নিকট আদালতের আদেশ মোতাবেক তদন্তাধীন রয়েছে।
বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য এডভোকেট মোঃ আলমগীর হোসেনকে এসএস পাইপ দিয়ে পিটিয়ে বাম পা ভেঙে ফেলে। আলমগীর হোসেন কর্তৃক বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতিতে দায়েরকৃত অভিযোগ বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জহুরুল হক নান্না বলেন, অ্যাড. মনিরুল ইসলাম মনির দীর্ঘদিন ধরেই পেশাগত অসদাচরণ ও নানা অনিয়ম কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় তাকে বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।