বিয়ের দাবিতে জামালপুর থেকে বরগুনায় এসে অনশণ করা সেই তরুণীকে অবশেষে পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নিতে তিনটি শর্ত দিয়েছেন মাহমুদুল হাসানের বাবা।
শুক্রবার (৬ মে) বিকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেতাগী উপজেলার কাজিরাবাদ ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান হারুণ অর রশিদ সোনা মিয়া।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে চান্দখালী বাজার সংলগ্ন ওই ভাড়া বাসায় গিয়ে তরুণীর সঙ্গে দেখা করেন মাহমুদুল হাসানের বাবা-মা। এসময় পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নিতে ওই তরুণীকে তিনটি শর্ত পূরণের প্রস্তাব দেন মাহমুদুল হাসানের বাবা মোশাররফ হোসেন।
তাঁর দেওয়া শর্তগুলো হলো- ওই তরুণীর আগের বিয়ের তালাকনামা দেখাতে হবে, অভিভাবক (বাবা-মা) নিয়ে আসতে হবে এবং মিডিয়ার কাছে কোনো কথা বলা যাবে না।
এসব শর্ত পূরণ করলে তিনি তার ছেলে মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে ওই তরুণীর বিয়ে দেবেন। তবে শর্ত পূরণের ক্ষেত্রে কোনো সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি বলেও জানান ইউপি চেয়ারম্যান হারুন আর রশিদ সোনা মিয়া।
চেয়ারম্যান বলেন, জামালপুর থেকে আসা ওই তরুণী মাহমুদুল হাসানের বাবার শর্ত মেনে নিয়ে আপাতত মোশাররফ হোসেনের ভাড়া বাসাতেই অবস্থান করবেন। তবে শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে বিয়ের দাবি মেনে নেবেন না মাহমুদুল হাসানের বাবা মোশাররফ হোসেন।
ইউপি চেয়ারম্যান হারুণ অর রশিদ সোনা মিয়া আরও বলেন, আমরা ছেলের বাবা, মামা ও ফুপুসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বৈঠকে বসে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাকে যে শর্ত দেওয়া হয়েছে সেটা পূরণ করলে মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে তার বিয়ের দাবি মেনে নেওয়া হবে। যেহেতু বিষয়টি আলোচিত, এ কারণে মেয়েটির লিগ্যাল গার্ডিয়ান ছাড়া বিয়ে সম্ভব নয়। যদি তার বাবা-মা ও আগের বিয়ের তালাকনামা হাজির করতে পারে তবেই বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হবে। আপাতত এটাই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে শর্তের বিষয়ে জানতে গণমাধ্যমকর্মীরা ওই বাড়িতে গেলে তরুণী গণমাধ্যমের কাছে কোন মন্তব্য করেননি। এছাড়াও মাহমুদুল হাসানের বাবাও কোনো মন্তব্য করেননি।
তবে শুক্রবার বিকালে মুঠোফোনে ওই তরুণী নিজেই গণমাধ্যমের কাছে জানান, শুক্রবার রাতে মাহমুদুল হাসানের বাবা-মা তাদের ভাড়া বাড়িতে এসে তার সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা তেকে পুত্রবধূ করারা শর্তে তার কাছে আগের বিয়ের তালাকনামা চেয়েছেন ও অভিভাবকদের ডাকতে বলেছেন।
তিনি আরো জানান, শুক্রবার সকালে অবরুদ্ধ থাকা মাহমুদুল হাসানের মামা ওই বাড়ি থেকে চলে গেছেন। দুপুরে নারী নেত্রী পরিচয় দেয়া দুজন নারী মাহমুদুল হাসানের বাবা-মায়ের সাথে এসে তার সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে তার তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বলে অভিযোগ ওই তরুণীর।
ওই তরুণী বলেন, ‘আমি খুব বিপদে আছি। প্লিজ আমাকে বাঁচান। আমাকে ওই বাড়ির অন্য একটি রুমে নিয়ে এখন আটকে রাখা হয়েছে। নারী নেত্রী পরিচয় দেয়া আপুরা আমাকে ভয় দেখিয়ে গেছে। বিয়ের দাবি মেনে নেয়ার কথা বললেও সবাই মিলে আমাকে মামলা ও পুলিশে দেয়াসহ নানা ধরনের ভয় দেখাচ্ছে। আমার ফোনটিও কেড়ে নিতে চাচ্ছে।’
উল্লেখ্য, গত ২৮ এপ্রিল জামালপুরের এক তরুণী বিয়ের দাবিতে ঢাকা থেকে বরগুনায় এসে এক যুবকের ভাড়া বাড়ির সামনে অনশন শুরু করেন।
সে সময় ওই তরুণী জানান, জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে তাঁর গ্রামের বাড়ি। এ ছাড়াও ঢাকার উত্তরায় থাকেন এবং সেখানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়ছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
ওই তরুণী আরও দাবি করেন, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজিতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে অধ্যয়নরত মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রে তরুণীর প্রেম হয়। মাহমুদুল হাসানও রাজধানীর উত্তরায় থেকে পড়াশোনা করেন। তিন বছর সম্পর্ক থেকে লিভিং রিলেশনের পর বিয়ের জন্য সম্প্রতি চাপ দিলে মাহমুদুল নানা অজুহাতে এড়িয়ে যেতে থাকেন। রোজার শুরুতে মাহমুদুল গ্রামের বাড়ি চলে আসেন। বাড়িতে আসার পর তরুণীর সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেন। কয়েক দিন ধরে তাঁর ফোন নম্বরটি বন্ধ। এরপরই তরুণী বরগুনায় এসে চান্দখালী বাজার সংলগ্ন মাহমুদুলের ভাড়া বাসার সামনে অবস্থান নেয়। এরপরই মাহমুদুল ও তাঁর পরিবার বাসায় তালা দিয়ে গা ঢাকা দেন।