ঢাকাবুধবার, ৭ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, রাত ৯:৪৮
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সুগন্ধা ট্রাজেডি : নিখোঁজদের পরিণতি জানতে স্বজনদের অপেক্ষা

জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক
জানুয়ারি ২৪, ২০২২ ৭:৪৫ অপরাহ্ণ
পঠিত: 240 বার
Link Copied!

ঝালকাঠির সুগন্ধা লঞ্চে আগুন দুর্ঘটনার একমাস পুর্ণ হয়েছে। এ ঘটনায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের কি পরিণতি হয়েছে এখনো জানেন না স্বজনরা। তবে নিখোঁজ কেউ যে ফিরবেনা, মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে এখন শুধু অপেক্ষা করছেন কি পরিণতি হয়েছিল জানতে। জেলা প্রশাসনের কাছে মোট ৩০জনের বিপরীতে ৪৮ জন স্বজন নমুনা দিয়েছেন। ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফলের জন্য এখন অপেক্ষা করছেন তারা, যাতে অন্তত কবরটি সনাক্ত করতে পারেন।

বরগুনা জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, সুগন্ধা ট্রাজেডিতে এখনও পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৪৮জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ঘটনার ২৪ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৪১জনের মরদেহ উদ্ধার হয় ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো ছয়জন মারা যান। জানুয়ারী মাসের ২ ও ৩ তারিখ এ দু’দিনে ঢাকায় চিকিৎসাধীন দগ্ধ দুজন ও সবশেষ ২১ জানুয়ারী আরো একজনের নারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, ঘটনার পর বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দগ্ধ ও আহত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ১০১ জন। এদের মধ্যে ১৯জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তর করা হয়েছিল। যাদের মধ্যে এখনো পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। বাকীরা নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (আইসিইউতে) চিকিৎসাধীন আছেন।নিহত ৪৮জনের মধ্যে সনাক্ত না হওয়ায় ২৩জনকে বরগুনায় ও একজনকে ঝালকাঠিতেসহ মোট ২৪জনকে দাফন করে জেলা প্রশাসন। আর বাকী ২৪জনের মরদেহ সনাক্ত করে নিয়ে যান স্বজনরা।

ঘটনার পর বরগুনা জেলা প্রশাসন নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা তৈরী করে। ১০ জানুয়ারী পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের ৩০জন নিখোঁজ থাকার তথ্য দিয়েছেন স্বজনরা। ২৭ ডিসেম্বর সিআইডির ফরেন্সিক বিভাগ ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ শুরু করেন এবং তিনদিনের নিখোঁজ ৩০ জনের বিপরীতে ৪৮জন স্বজনের নমুনা সংগ্রহ করেন। ওইসময় সিআইডির নমুনা পরীক্ষক রবিউল ইসলাম গণামাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, পরীক্ষার ফলাফল পেতে একমাসের বেশী সময় লাগতে পারে।

ঘটনার একমাস পূর্ণ হলেও নিখোঁজ ব্যক্তিদের কোন তথ্য জানতে পারেননি স্বজনরা। এখনো অনেকেই শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এছাড়া পরিবারের কর্মক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অনেকে। এদের মধ্যে কয়েকজন নারী ও শিশু রয়েছেন যারা অভিভাবকহীন অবস্থায় আত্মীয়-স্বজনদের আশ্রিত হয়ে আছেন।

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নে ছোট টেংরা গ্রামের আফজাল হোসেনের মেয়ে স্বামী পরিত্যক্তা ফজিলা আক্তার পপির এখনো খোঁজ মেলেনি। পপির মেয়ে লামিয়া তার নানু আফজাল হোসেনের আশ্রয়ে মা’ ফেরার(১১) অপেক্ষা করছেন এখনো। আফজাল বলেন, ‘মেয়ে হারানোর শোক আর নাতনীর ভবিষ্যত নিয়ে আমি চিন্তিত। আমি মারা গেলে আমার নাতনীকে কে দেখভাল করবে।

বরগুনা সদর উপজেলা বুড়িরচর ইউনিয়নের হাকিম শরীফ, তার স্ত্রী পাখী বেগম ও শিশুসন্তান নাসরুল্লাহ ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন। হাকিম শরীফের তিন সন্তান হাফসা বেগম (১৮) সুমাইয়া আক্তার (১৪) ও ফজলুল হক (১০) এখন অভিভাকহীন। তাদের দেখভাল ও ভরণ পোষণের জোগান দেয়ার কেউ নেই। হাফসা বলে, ‘আত্মীয়-স্বজনদের সহায়তায় এহন মোগো তিন ভাইবুইনের খাওন পড়ন চলে। এইরহম কতদিন কেডা মোগো দ্যাকপে। কেউ আইস্যা এট্টু খোঁজ নেয়নায় মোরা খাই নাকি না খাইয়া থাহি।’

বরগুনা সদর উপজেলার মোল্লাহোরা গ্রামের বাসিন্দা সুমন সরদার ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় তাঁর স্ত্রী তাসলিমা (৩০), দুই মেয়ে সুমাইয়া আক্তার (১৫) ও সুমনা আক্তার (১২) এখনো নিখোঁজ। সুমন বলেন, ‘ যাগো কয়বর (কবর) দিয়া দেছে হেইয়ার মইদেবদ মোর বউ মাইয়া পোলার কয়বর আছে কিনা, এহন খালি হেইডা জানতে অপেক্ষা করতে আছি। কয়বরডাও যদি দেহাইয়া দেতে পারত হেরা, তয় মুই কতকুন কাইন্দা কাইট্টা শান্তনা পাইতাম।’

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে নিহদের মধ্যে সনাক্ত হওয়া ২৪টি পরিবারকে ২৫ হাজার করে টাকা আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। তবে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদেরকে কোনো সহায়তা এখনো দেয়া হয়নি। বরগুনা জেলা নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি মনির হোসেন কামাল মনে করেন, লঞ্চে আগুনের ঘটনায় নিখোঁজ পরিবারগুলোর মধ্যে যারা অসহায় আছেন, রাষ্ট্রের উচিৎ তাদেরকে আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা দেয়া। এ ঘটনায় নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর মধ্যে অনেক নারী ও শিশু এখন অভিভাবকহীণ, কেউ কেউ আর্থিক টানপোড়েনে মানবেতন জীবন যাপন করছেন, আমি মনে করি এই পরিবারগুলোর সুরক্ষায় রাষ্ট্রের পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।”

বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, নিহত সনাক্ত হওয়া মরদেহের স্বজনদের আমরা প্রাথমিকভাবে ২৫ হাজার করে টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। আমরা ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা পেলেই ঠিক কতজন নিখোঁজ আছেন, এটা সনাক্ত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারগুলোকে চিহ্নিত করতে পারব। এরপর ‘সোশ্যাল সেফটি নেটের আওতায়’ বিশেষভাবে তাদের সহায়তার আওতায় আনা হবে। তবে তাদের সহায়তায় এখনো পর্যন্ত আলাদা কোনো কার্যক্রমের নির্দেশনা এখনো পাওয়া যায়নি।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।