প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর দেওয়ার অনিয়মের বিষয়ে উপজেলা পরিষদের মাসিক মিটিংএ শারিকখালী ইউপি চেয়ারম্যান উপস্থাপন করেন। এনিয়ে পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা হলে হট্টগোলের সৃষ্টি হলে ইউপি চেয়ারম্যানকে মিটিংএ না আসার জন্য উচ্চস্বরে অশোভন আচরণ করে ধমক দেন ইউএনও। বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) বেলা ১২ টার দিকে তালতলী উপজেলা পরিষদের ‘পায়রা’ হল রুমে এ ঘটনা ঘটে।
জানাগেছে, উপজেলা পরিষদের মাসিক মিটিং হয় মাসের শেষ দিনে ৩০ বা ৩১ তারিখ। সেই নিয়মেই আজকের মিটিং শুরু হয় বেলা ১১ টার দিকে উপজেলা পরিষদের ‘পায়রা’ হল রুমে। মিটিং চলাকালীন সময় শারিকখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল বাশার বাদশা তালুকদার তার ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ন প্রকল্পের ঘর দেওয়ার তালিকায় অনিয়ম হয়েছে বলে জানান ইউএনও মো. কাওছার হোসেন এর কাছে।
তখন ইউএনও ঘর যাচাই-বাচাইয়ের কর্মকর্তা পল্লী উন্নয়ন ও সফিরোজ আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন চেয়ারম্যান জানেন ও সে স্বাক্ষর করেছেন। তখনই চেয়ারম্যান প্রতিবাদ করলে তাকে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় অফিসার বলেন আপনি পাগল হয়েছেন। সেই উত্তরে চেয়ারম্যান বলেন আপনি পাগল হয়েছেন। এর ভিতরেই চেয়ারম্যানকে ইউএনও উচ্চস্বরে অশোভন আচরণের মাধ্যমে ধমক দিয়ে বলেন আপনি আর মিটিংএ আসবেন না। এক পর্যায় বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যান ও ইউএনও’র ভিতরে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। হট্টগোলের একপর্যায় ঐ ইউপি চেয়ারম্যান বের হয়ে যায়। সভাকক্ষে থাকা উপজেলা চেয়ারম্যান রেজবি উল কবির জোমাদ্দার ও বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, অনান্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানেরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিটিং এ অংশগ্রহন করা একাধিক ব্যাক্তি বলেন, মিটিং চলাকালে চেয়ারম্যানের সাথে যে আচারন করেছে সেটা আসলেই দুঃখজনক। চেয়ারম্যান একজন বয়োজেষ্ঠ্য মানুষ তার সাথে ইউএনও’র এমন উচ্চস্বরে ধমক দেয়া ঠিক হয়নি। তারা আরও বলেন এই ইউএনও রাজনৈতিক ব্যক্তি থেকে শুরু করে সকল শ্রেনীর মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। এছাড়াও তার কথার অবাধ্য হলে মারধরের কথাও বলে হুমকি দিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
শারিকখালী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল বাশার বাদশা তালুকদার বলেন, আজকের সকালে মিটিংএ অংশগ্রহন করি। মিটিং চলাকালে আমার ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ন প্রকল্পের ৫টি ঘর দেওয়া হয়েছে। সেখানে কিছু অনিয়ম হয়েছে। এমনকি আমাকে এই ঘরের বিষয়ে কিছু জানায়নি। তাই বিষয়টি ইউএনওকে জানাইছি। এই সময় ঘর যাচাই-বাচাইয়ের কর্মকর্তা পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় অফিসার আমাকে পাগল বলেন। আমিও বলেছি আপনি পাগল হইছেন। এ নিয়ে ইউএনও’র সাথে আমার সাথে তুমুল ঝগড়া হইছে। এক পর্যায়ে ইউএনও উচ্চস্বরে ধমক দিয়ে বলেন চুপচাপ বসেন না হয় মিটিংরুম থেকে চলে যান। তিনি আরও বলেন আমি মাননীয় সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসক এর কাছে বিচার দিবো। আমাকে কেন এভাবে অপমান করলেন তিনি।
ছোট বগী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মু. তৌফিকউজ্জামান তনু বলেন, ইউএনও সাহেব স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধিসহ সকল মানুষের সাথে খারাপ আচারণ করে থাকেন প্রায় সময়ই। একজন সম্মানীত ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে এমন আচরন খুবই দুঃখজনক।
ঘর তদন্তকারী কর্মকর্তা পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় অফিসার ফিরোজ আলমের ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজবি উল কবির জোমাদ্দার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, এমনেতেই আলোচনা হয়েছে। কিছুই হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কাওছার হোসেন বলেন, বাদশা তালুকদার আমাদের পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান। আমাদের পরিষদের মিটিং চলাকালে আশ্রায়ন প্রকল্পের ঘর নিয়ে কথা হয়েছে। ওনার ইউনিয়নের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর যাচাই বাছাই কর্মকর্তা হিসেবে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় অফিসার ফিরোজ আলম দায়িত্বে ছিলেন। মিটিং এ চেয়ারম্যান ঐ অফিসারকে পাগল বলেছেন। একজন অফিসারকে তিনি পাগল বলতে পারেন না। এ জন্য তাকে বলা হয়েছে এটা মিটিং এখানে গঠন মুলক কথা বলেন। এর বাহিরে কিছুই হয়নি। সে যে অভিযোগ করেছেন সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।