তালতলীর অজপাড়াগাঁয়ের কৃষক আজিজ হাওলাদার। উন্নত প্রজাতির কুল বল সুন্দরী চাষ করে ভাগ্য বদলে গেছে তার। তিনিই দক্ষিণাঞ্চলে প্রথম বল সুন্দরী চাষ শুরু করেন। তার বাগান দেখে আগ্রহী হচ্ছেন স্থানীয় অনেক কৃষক। চলতি বছরে এক লাখ টাকা খরচ করে ইতোমধ্যে তিনি ৩ লাখ টাকার কুল বিক্রি করেছেন।
তালতলীর প্রত্যন্ত গ্রাম পশ্চিম বাদুরগাছার কৃষক আব্দুল আজিজ। তার একমাত্র ছেলে আবদুর রাজ্জাক ছোটবেলা থেকেই কৃষি এবং বাগানে আগ্রহী ছিলেন। ইন্টারনেটে ভিডিও দেখে বাগান সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান আয়ত্ত করেন। পরে বরই চাষে বাবাকে পরামর্শ দেন। ছেলের পরামর্শ অনুযায়ী গত বছর জুন-জুলাই মাসে বাড়ি সংলগ্ন ৪৫ শতাংশ জমিতে উন্নত জাতের কুল বল সুন্দরী চাষ করেন।
জানা গেছে, আব্দুল আজিজ মাগুরা, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সাড়ে তিনশো বল সুন্দরীর চারা এনে রোপণ করেন। আজিজের অক্লান্ত পরিশ্রম ও পরিচর্যায় ছয় মাসেই ফলন আসতে শুরু করে। সবকটি গাছেই থোকায় থোকায় কুল ধরে। বরই চাষ করে ৬-৭ মাসে ভাগ্য বদলে গেছে কৃষক আজিজের।
এই জাতের কুল চাষে তেমন খরচ নেই। তবে চারা সংগ্রহ করতে বেগ পেতে হয়। ১ লাখ টাকা খরচ করে এ পর্যন্ত তিনি ৩ লাখের বেশি টাকা আয় করেছেন। চলতি মৌসুমে ৫ লাখ টাকার বড়ই বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন আজিজ। ফলন ভালো হওয়ায় আগামী মৌসুমের জন্য চারা সংগ্রহ শুরু করেছেন তিনি।
আব্দুল আজিজ হাওলাদার বলেন, আমার ছেলের ছোট থেকেই কৃষির প্রতি ঝোঁক ছিল। ২০০৭ সালে চাকরিতে জয়েন করে। ইন্টারনেটে বরই চাষের ভিডিও দেখে খুঁটিনাটি আয়ত্ব করে। গত বছর বাড়ি এসে বল সুন্দরী বরই সম্পর্কে জানালে আমি অনুপ্রাণিত হয়ে চাষ শুরু করি। শুরুতে ভাবিনি এত লাভ করতে পারব। মোট ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে আমার। তবে ৬-৭ মাসেই আয় করেছি ৩ লাখ টাকা।
তিনি আরও বলেন, আমার এ সফলতা দেখে এলাকার অনেক কৃষকই বরই চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। ২৫-২৭ জনের মতো কৃষক আমাকে চারা সংগ্রহ করে দিতে বলেছে। সাধ্যমতাে তাদের সাহায্য করবে আমি। আমি আরও ৩৩ শতাংশ জমি প্রস্তুত করেছি। তাতেও বল সুন্দরী কুলের চারা রোণে করবো। আশা করি আমি অনেক লাভবান হবো।
তালতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, অস্ট্রেলিয়ান জাতের বল সুন্দরী কুল দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি খেতেও সুস্বাদু। দক্ষিণাঞ্চলে এই বড়ই চাষ নেই বললেই চলে। আব্দুল আজিজই তালতলীতে প্রথম এই বড়ই চাষ করেন এবং লাভবান হয়েছেন। দেশের যুবসমাজ চাকরির জন্য বসে না থেকে এই বড়ই চাষে অনুপ্রাণিত হলে স্বাবলম্বী হতে পারবে। যারা বড়ই চাষে আগ্রহী তাদের সবাইকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।