ঢাকাশনিবার, ২রা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ৪:৫১
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ঠিকাদার- প্রকৌশলী সিন্ডিকেট- পাউবোর কোটি কোটি টাকার কাজ ভাগাভাগির পাঁয়তারা

দৈনিক সৈকত সংবাদ
ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৩ ২:১১ অপরাহ্ণ
পঠিত: 193 বার
Link Copied!

রুদ্র রুহান, বরগুনা
বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক হাজার ছয়’শ কোটি টাকার কাজে অনিয়ম ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে এক ঠিকাদারের বিরুদ্ধে প্রকল্পের ২০কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। অনৈতিক সুবিধার বিনিময় ও স্বজনপ্রিতির আশ্রয় নিয়ে জালিয়াতিতে সহযোগীতা করে পাউবো বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম ওই ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিয়েছেন বলে স্থানীয় ঠিাকাদারদের অভিযোগ।

পাউবোর তথ্যমতে, ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) পাউবো বরগুনার আওতায় বরগুনা জেলার আমতলী, তালতলী বেতাগী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন খাল খনন, নদীতীর সুরক্ষায় বøক স্থাপন, বেরিবাঁধ নির্মাণ ও সংষ্কার, ¯øুইজগেট নির্মাণ ও সংস্কার ও রেগুলেটর নির্মাণ কাজসহ পাউবোর আরো বেশ কিছু সংস্কার ও নির্মাণ প্রকল্পে এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা অনুমোদন হয়। এর মধ্যে গতবছরের ২৭ ডিসেম্বর বরগুনার আমতলী, তালতলী, সদর ও বেতাগী উপজেলায় ২৮টি প্যাকেজের আওতায় মোট এক হাজার ১২০০ কোটি টাকার কাজের দরপত্র আহবান করে বরগুনা পানি উন্নয়ণ বোর্ড। দরপত্রের ১১ নম্বরে অঞইচড-২০ প্যাকেজে তালতলী উপজেলার পশইরবুনিয়া এলাকায় প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যায়ে পায়রা নদীর ভাঙন থেকে ঝুঁকিপূর্ণ অংশ সুরক্ষায় বøক নির্মাণ কাজ পায় যৌথমালিকানার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আবুল কালাম আজাদ।

কিন্ত আবুল কালাম আজাদ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির দরপত্রে অংশ নেয়ার যোগ্যতা ছিলনা, জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতার সনদ তৈরি করে প্যাকেজের আওতায় ২০ কোটি টাকার একটি কাজ বাগিয়ে নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। জালিয়াতিতে সহযোগীতা করেছেন খোদ পাউবো বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নুরুল ইসলাম, এমন অভিযোগ কয়েকজন ঠিকাদারের।

বরগুনার স্থানীয় ঠিকাদার মো. মাঈনুদ্দিন আসাদ বলেন, আবুল কালাম আজাদ নামের লাইসেন্সটির মালিক পটুয়াখালী সদরের আবুল কালাম আজাদ নামের এক ব্যক্তি। তার কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়ে চুক্তিতে কাজ করেন স্বপন মৃধা নামের পটুয়াখালী আরেক ব্যক্তি। স্বপন মৃধার ছেলে নুরে আলম ইভান মুলত এই লাইসেন্সসহ মেসার্স মহিউদ্দীন আহম্মেদ, মেসার্স কহিনুর এন্টারপ্রাইজ ও ওরিয়েন্ট ট্রেডিং নামে মোট চারটি লাইসেন্স ব্যবহার করে যৌথভাবে দরপত্রে অংশগ্রহন করে থাকেন। বরগুনায় এক হাজার ৬০০ কোটি টাকার কাজ অনুমোদন হওয়ার নুরে আলম ইভান কাজ পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। কাজ বাগানোর উদ্দেশ্যে ঠিাকাদর ইভান পাউবো বেশ কয়েকজন নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে সখ্যতা গড়ে তোলেন এবং কৌশলে লাইসেন্সের অনুকূলে কাজ করানোর বেশ কিছু ভুয়া সনদ সংগ্রহ করে। এছাড়াও বরগুনার ততকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী কাইছার আলমের সিল স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ১৯.৪.২০২১ তারিখে কোটি টাকার মেসার্স মহিউদ্দীন আহম্মেদ, মেসার্স কহিনুর এন্টারপ্রাইজ ও ওরিয়েন্ট ট্রেডিং লাইসেন্সের অনুকূলে কাজের ভুয়া সনদ তৈরী করে করেছেন। বরগুনা কার্যালয়ের বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নুরুল ইসলামের স্ত্রী ও ঠিকাদার নুরে আলম ইভানের স্ত্রী সহপাঠি। বরগুনায় এসে নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলামের বাসায় থাকেন ঠিকাদার ইভান। কাইছার আলম তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হয়ে পটুয়াখালী বদলী হয়ে যাওয়ার তিনি এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলামের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে ওই সনদের সত্যতা যাচাই করিয়ে নিয়েছেন ইভান। আসাদ বলেন, ভুয়া সনদ ধরা পড়ার ভয়ে রাজনৈতিক তদ্বির করিয়ে পটুয়াখালী তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী কাইছার আলমকে প্রধান কার্যালয়ে বদলীও করিয়েছে এই ইভান ও প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম চক্র। ঠিকাদারদের দাবি করা ভুয়া সনদের সত্যতা যাচাই করতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় বরগুন পাউবোর সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী কাইছরার আলমের সাথে। হোয়াটসঅ্যাপে সনদটি পাঠিয়ে দেয়ার পর কাইছার আলম দেখে জানান, ওই তিন লাইসেন্সের অনুকূলে কাজের সনদ তিনি দেননি। সিল স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে এটি তৈরী করা হয়েছে। সনদ ও সত্যতা যাচাইয়ের প্রত্যায়ন দুটোই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে।

জালিয়াতির মাধ্যমে সনদ সংগ্রহ করে টেন্ডারে অংশগ্রহন

আরেক ঠিকাদার আবদুল্লাহ আল মুসা বলেন, ইভানের ব্যবহৃত দুটি লাইসেন্স মেসার্স আবুল কালাম আজাদ এবং মেসার্স মিজানুল আলমের নামে পাবার প্রক্রিয়া হিসাবে তিনি একদিকে যেমন জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে থাকেন অপরদিকে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রি জাহিদ ফারুক ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক পটুয়াখালীর অ্যডভোকেট আফজাল হোসেনের দোহাই দিয়ে কাজ বাগিয়ে নেন। এ সংক্রান্ত মুঠোফোনের কথোপথকন প্রতিবেদককে সরবরাহ করেছেন ঠিকাদার মুসা। মুসা বলেন, বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম স্থানীয় ঠিকাদারদের অনৈতিক সুবিধায় কাজ নেয়ার প্রস্তাব দিয়েও ব্যর্থ হন। এরপর পর ইভানের সাথে আঁতাত করে তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে জাল জালিয়াতিসহ প্রয়োজনমত সব সুবিধা দিয়েছেন। আমরা বিষয়টি তদন্তের দাবিতে পাউবোর উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

জালিয়াতি করে তৈরী সনদের সত্যতা যাচাই সনদ দিয়েছেন বরগুনা পাউবোর বর্তামান নির্বাহী প্রকৌশৈলী

ঠিকাদার নুরে আলম ইভানের সাথে মুঠোফোনে বলেন, গত ২০ থেকে ৩০ বছর ধরে আমরা পারিবারিকভাবে পানি উন্নয়ণ বোর্ডের ঠিকাদারি কাজের সাথে যুক্ত। আমাদের লাইসেন্সে অভিজ্ঞতার কোনো ঘাটতি নেই। আসলে বরগুনার বেশ কয়েকজন ঠিকাদার এর আগের আমাদের লাইসেন্সে কাজ করেছে। এবার আমরা তাদের লাইসেন্স না দেয়ায় কাজ পায়নি। এ কারণে এখন তারা এসব মিথ্যে তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তের চেষ্টা করছে। আমার কোনো কাগজপত্রই জাল জালিয়াতির করে তৈরি করা নয়। বিধিমোতাবেক দরপত্র প্রকৃয়ায় অংশ নিয়ে তালতলীতে প্রায় ২০ কোটি টাকার কাজ পেয়েছি।

পাউবো বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নুরুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঠিকাদার ইভানের সাথে আমার ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কোনো সম্পর্ক নেই। জাল জালিয়াতি প্রসঙ্গে বলেন, ঠিকাদারকে জালিয়াতির সুযোগ দেয়া প্রসঙ্গে বলেন, বিধিমোতাবেক লাইসেন্সের অনুকূলে কাজ পেয়েছেন ঠিকাদাররা। এখানে জালিয়াতির কোনো সুযোগ নেই।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।