জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বরগুনা সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সুভাষ চন্দ্র হাওলাদার।
শনিবার সন্ধ্যার পর অভিযুক্ত জেলা ছাত্রলীগের কয়েক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জিডির ছবি প্রকাশ করে যুবলীগ নেতার সমালোচনা করেন পোস্ট দিলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
রবিবার সকাল ১০টার দিকে সদর থানার পরিদর্শক আলী আহমেদ জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শুক্রবার দুপুরের দিকে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সুভাষ চন্দ্র হাওলাদার ১০ ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে শুক্রবার একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। জিডিতে জেলা ছাত্রলীগের নেতাসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করেছেন তিনি।জিডির বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
জিডিতে বলা হয়, ‘গত বৃহস্পতিবার বরগুনা জেলা যুবলীগ আয়োজিত যুব সমাবেশ ও আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নিই। রাত ৯টার দিকে সভাটি শেষ হলে স্থানীয় সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর কার্যালয়ে চা চক্রে মিলিত হই। পরে বামনার বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়ে রাত ১০টার দিকে বড়ই ফেরিতে উঠি। ফেরিতে ওঠার পর ১৫ থেকে ২০ জন আমার গাড়ির আশপাশে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করেন এবং আমার গাড়ি আক্রমণের চেষ্টা চালান। আমার সঙ্গে থাকা ছেলেরা তাঁদের অনেককে চিনে ফেলায় তাঁরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন। আমার ধারণা, তাঁরা আমাকে হত্যার জন্য আক্রমণ করতে এসেছিল। তাঁদের গতিবিধি দেখে এমনটা মনে হয়।’
জিডিতে জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নাসিম, উপশিক্ষা ও পাঠচক্রবিষয়ক সম্পাদক সুমন রায়, সদস্য গোলাম রাব্বানি, ঢলুয়া ইউনিয়ন সভাপতি কামরুল, কর্মী শাজনুস শরীফ, ইমরান হোসেন, মুন্না, জুয়েল, মেহেদী, মো. সাইফুল ইসলামের নাম উল্লেখ করা হয়।
ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম সাগর বলেন, “ঢলুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি কামরুল ইসলামের বাড়িতে মাহফিলে যাবার সময় আমরা কয়েকজন ফেরিঘাটে চা খেতে গিয়েছিলাম। তখন দেখেছি সুভাষ দার ও পুলিশের একটি গাড়ি ফেরিতে উঠতেছে। আমরা চা খেয়ে চলে আসছি সেখান থেকে। কিন্ত তিনি কেন এভাবে সন্দেহ করে জিডি করলেন এটা আমার বোধগম্য নয়।”
ঢলুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি কামরুল ইসলাম বলেন আমার বাড়িতে মাহফিলে জেলা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার দাওয়াত ছিল আমরা তাদেরকে নিয়ে বড়ইতলা ফেরিঘাটে চা খেতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সুভাষদা বিষয়টিকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন যে আমরা তার ওপরে হামলা করতে গিয়েছি। এটা তার নিজের মনের দুর্বলতা। কেন্দ্রীয় যুবলীগের নেতা হয়ে তিনি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এভাবে জিডি করা কতটা যৌক্তিক?
এ বিষয়ে সদস্য সুভাষ চন্দ্র হাওলাদার বলেন, ‘জেলা যুবলীগের কমিটিতে আমরা অনিককে সাধারণ সম্পাদক বানাতে পারিনি। এ নিয়ে আমার প্রতি ক্ষোভ আছে। অনিকের ধারণা, আমি কমিটি বানিয়েছি, কিন্তু তাঁকে সেক্রেটারি বানাইনি। এটি নিয়ে আজেবাজে মন্তব্য করেন। ঘটনার দিন রাত ১০টার দিকে সাংসদ শম্ভু দাদার কাছ থেকে রওনা হই। কিছুক্ষণের মধ্যে ফেরিঘাটে পৌঁছাই। সেখানে ফেরির মধ্যে ও আশপাশের দোকানে বেশ কয়েকজন পোলাপানকে দেখতে পাই। আমাদের সঙ্গে পাথরঘাটা থানার একটি পিকআপ থাকায় তাঁরা সেখান থেকে চলে যান। আমার ওপর হামলা হতে পারে এমন আশঙ্কায় জিডি করেছি। এ ছাড়া বিষয়টি শম্ভু দাদা ও পুলিশ সুপারকে জানালে তাঁরা জিডি করার পরামর্শ দেন।’
অভিযোগের বিষয়ে সদ্য ঘোষিত জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান ওরফে অনিক বলেন, ‘ আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছিলেম গুনার সদর থানায় ছাত্রলীগের কয়েক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে জিডি করেছেন সুভাষদা। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি একজন কেন্দ্রীয় নেতা, জেলা ছাত্রলীগকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে তিনি এমনটা করছেন কি না, জানি না। তিনি আমাকে এ বিষয়ে আমাকে কিছুই বলেননি। এ ছাড়া তিনি কবে থেকে আওয়ামী লীগ করেন, তা বরগুনাবাসী জানে। এ ঘটনার জন্য আমি মর্মাহত। দ্রুত সভা করে ব্যবস্থা নেব। তবে বিষয়টি তিনি আমাকে জানাতে পারতেন বা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে জানাতে পারতেন। তিনি কার প্ররোচনায় এ কাজ করছেন, তা জানি না।