ইউক্রেন সীমান্তে রুশ সামরিক উপস্থিতির প্রতিক্রিয়ায় আমেরিকার সাড়ে আট হাজার মার্কিন সৈন্যকে প্রস্তুত অবস্থায় রাখার সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাশিয়া।
প্রেসিডেন্ট পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকফ যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে উত্তেজনায় ইন্ধন যোগানোর অভিযোগ করে বলেছেন তারা মার্কিন পদক্ষেপ উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে তিনি বলেছেন আমেরিকার এই সিদ্ধান্ত চলমান কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার ওপর কোন প্রভাব ফেলবে না।
পূর্ব ইউরোপে নেটোর সদস্য দেশগুলোকে প্রয়োজনে সহায়তা করতে আমেরিকা সাড়ে আট হাজার সৈন্যকে প্রস্তুত রেখেছে বলে আমেরিকা গতকাল ঘোষণা করেছে। আমেরিকা ৯০ টন ওজনের প্রাণঘাতী অস্ত্রও ইউক্রেনে পাঠিয়েছে।
বিবিসির মস্কো সংবাদদাতা ক্যারোলাইন ডেভিস বলছেন মার্কিন সৈন্য যদিও ইউক্রেনে মোতায়েন করা হবে না, কিন্তু পেন্টাগনের ভাষায় “সেরকম পরিস্থিতি তৈরি হলে” এই সৈন্যদের যে নেটো জোটভুক্ত অন্য দেশে মোতায়েন করা হতে পারে সেটা রাশিয়ার জন্য উদ্বেগ তৈরি করেছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকফ তার দৈনন্দিন সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন চলমান কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে রাশিয়া দাবি করেছে ইউক্রেনকে যেন কখনও নেটো জোটে যোগ দিতে দেয়া না হয় এবং রুশ সীমান্ত থেকে যেন নেটোর সৈন্য প্রত্যাহার করা হয়। তিনি বলেন আমেরিকা তাদের লিখিত উত্তরে কী জানায় তার ওপর কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার ভবিষ্যত নির্ভর করছে।
এ সপ্তাহের পরের দিকে আমেরিকার কাছ থেকে লিখিত জবাব আসার কথা রয়েছে।
আরও পড়তে পারেন:

ছবির উৎস,RUSSIAN DEFENCE MINISTRY
আমেরিকা কী সহায়তা দিচ্ছে?
পেন্টাগন বলেছে আমেরিকা সাড়ে আট হাজার সৈন্যকে লড়াইয়ের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত অবস্থায় রেখেছে যাতে প্রয়োজনে অতি দ্রুত তাদের মোতায়েন করা যায়।
তবে নেটোর সামরিক জোট দ্রুত জবাব দেবার জন্য র্যাপিড রিঅ্যাকশন ফোর্সকে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নিলে অথবা “পরিস্থিতির অবনতি হলে” তবেই এই সৈন্যদের মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছেন পেন্টাগনের তথ্য সচিব জন কার্বি।
তিনি আরও বলেছেন এই সৈন্যদের ইউক্রেনে মোতায়েন করা হবে না।
ডেনমার্ক, স্পেন, ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডস সহ নেটোর কিছু সদস্য দেশ ওই এলাকায় প্রতিরক্ষা জোরদার করতে পূর্ব ইউরোপে জঙ্গি বিমান এবং রণতরী পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছে।
আমেরিকার পাঠানো ৯০ টন ওজনের গোলাবারুদ এবং “রণাঙ্গনে ব্যবহৃত প্রতিরক্ষা অস্ত্রসম্ভার” সপ্তাহান্তে ইউক্রেনে পৌঁছেছে।

ছবির উৎস,EPA
পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে একজোট
রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে। মস্কো যদিও বলেছে ইউক্রেন আক্রমণের কোন পরিকল্পনা তাদের নেই।
আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার সৈন্য সমাবেশ বাড়ানোর ব্যাপারে পদক্ষেপ নিয়ে ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে “সম্পূর্ণ মতৈক্য” রয়েছে।
সোমবার এই সঙ্কট নিয়ে এক বৈঠকে পশ্চিমা দেশগুলো একমত হয়েছে যে রাশিয়া কোনরকম আক্রমণ চালালে দেশটির ওপর “দ্রুত” এবং “নজিরবিহীন” নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
রাশিয়া আক্রমণের পরিকল্পনা নাকচ করে দিলেও ইউক্রেন সীমান্তে দেশটি এক লাখ সৈন্য মোতায়েন করেছে।
সোমবারের বৈঠকে আমেরিকা ও ব্রিটেনের সাথে যোগ দেয় ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, পোলান্ড এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। নেটোর প্রধান জেন্স স্টলটেনবার্গও টেলিফোনে বৈঠকে যোগ দেন।
ব্রিটেনে ডাউনিং স্ট্রিটের একজন মুখপাত্র জানান “রুশ আগ্রাসনের মুখে আন্তর্জাতিক অখণ্ডতা রক্ষার ওপর নেতারা গুরুত্ব আরোপ করেছেন।”
ভিডিও কলের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত ৮০ মিনিটের এই বৈঠকের মূল লক্ষ্য ছিল রুশ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর জবাব কী হবে তা নিয়ে কিছু মতভেদ প্রকাশ পাবার পটভূমিতে অখণ্ড কৌশল নিয়ে মিত্র দেশগুলোর মধ্যে মতৈক্য প্রতিষ্ঠা।
আমেরিকা ও ব্রিটেন সহ কিছু পশ্চিমা দেশ ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্য পাঠালেও জার্মানি প্রতিরক্ষার জন্য অস্ত্র পাঠাতে ইউক্রেনের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে। জার্মানির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ক্রিস্টিন ল্যামব্রেখস্ট স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন জার্মানি ইউক্রেনকে চিকিৎসা সহায়তা দেবে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সোমবার সতর্ক করে দিয়েছেন যে, রাশিয়া ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে একটা ঝটিকা হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে এই মর্মে একটি “অস্পষ্ট” গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, ব্রিটেন কিয়েভে তাদের দূতাবাস থেকে কর্মী সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
আমেরিকাও তার দূতাবাস কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের ইউক্রেন ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে।
ইইউর পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল বলেছেন তারা ইইউ কর্মীদের দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিচ্ছেন না, কারণ এই উত্তেজনাকে তিনি “নাটকীয় চেহারা” দিতে চান না।