আমতলীর কৃষি রেডিও (এফএম ৯৮.৮) এর অনুষ্ঠান প্রযোজক ও স্ক্রিপট রাইটারের বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ অনৈতিক কাজের লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। লিখিত অভিযোগের পর মঙ্গলবার সকাল থেকে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তদন্ত করছেন বরিশাল আঞ্চলিক কৃষি তথ্য অফিসার।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর আমতলীতে কৃষি রেডিওর কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই অনুষ্ঠান প্রযোজক শামীম মৃধা ও স্ক্রীপরাইটার্স শাহনাজ পারভীন দায়িত্ব পালন করে আসছে। দায়িত্ব পালন থেকে তাদের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছা চারিতা, ভলাটিয়ারদের বাবা মা তুলে গালমন্দ এবং দুর্নীতিসহ দুজনের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ ওঠে। কৃষি রেডিওতে ১২ জন ভলানটিয়ার রয়েছে। এদের জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজের জন্য রয়েছে যাতায়ত ভাতা এবং বিভিন্ন বিষয়ের উপর ফেলোশিপ। রয়েছে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ঢাকায় প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা। কিন্ত এখানে শামীম মৃধা এবং শাহনাজ পরভীন ভলানটিয়ারদের যাতায়তের ভাতা না দিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে আত্মসাৎ করেছেন। এমনকি কোন ভলানটিয়ারকে ঢাকায় প্রশিক্ষনে পাঠালে সেখান থেকে প্রশিক্ষন বাবদ পাওয়া টাকা থেকে হাজারে ১শ’ টাকা করে কেটে রাখতেন। টাকা দিতে না চাইলে তাদের রেডিও থেকে বের দেওয়ার হুমকি দিতেন।
সিফাত নামের এক ভলানটিয়ার অভিযোগ করে বলেন, আমি ঢাকায় গিয়ে প্রশিক্ষন বাবদ ৫ হাজার টাকা পেয়েছি। আমতলী আসার পর শাহনাজ পারভীন এবং শামীম মৃধা তা থেকে ৫শ’ টাকা জোর করে রেখে দেন। মাঈনুল ইসলাম নামে এক ভলানটিয়ার অভিযোগ করে বলেন, আমি ৩ মাসের একটি ফেলোশিপ বাবদ ১২ হাজার টাকা পাই। সেখান থেকে শাহনাজ পারভীন এবং শামীম মৃধা জোর করে ১ হাজার ৫শ’ টাকা রেখে দেন।
ভলানটিয়ার সাইদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ২০২০ সালে শাহনাজ পারভীন এবং শামীম মৃধা আমার নিকট থেকে ফেলোশিপের ১ হাজার ৫শ’ টাকা জোর করে রেখে দেয়।
অফিস সহকারী সফিকুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, অফিসের কাজের জন্য বাহিরে গিয়ে আসতে বিলম্ব হওয়ায় অনুষ্ঠান প্রযোযোগ শামীম মৃধা আমাকে মারধর করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভলানটিয়ার অভিযোগ করে বলেন, শমীম মৃধা এবং শাহনাজ পারভীনের মধ্যে রয়েছে অনৈতিক সম্পর্ক। তারা দুজনে মিলে অফিসে রাম রাজত্ব সকায়েম করেছেন। কেই তাদের ভয়ে মুখ খুলতে চায় না। রেডিওর প্রতিষ্ঠাকালীন দুজন কর্মকর্তা তাদের অনৈতিক কাজ দেখে ফেলায় অনুষ্ঠান প্রযোজক জাকির হোসেন ও স্ক্রীপট রাইটার সাইদুল রহমানকে সন্ত্রাসী ভারা করে শামীম মৃধা এবং শাহনাজ পারভীন তাদের মারধর করেন। পরে তারা অন্যত্র বদলী হয়ে চলে যান। এছাড়া শামীম মৃধা এবং শাহনাজ পারভীনের অনৈতিক কাজ দেখে ফেলায় সাবেক এক বোর্ডকাষ্টার জাফর ওয়াহিদের বিরুদ্ধে সরকার বিরোধী প্রচারনা এবং জামাত শিবিরের অভিযোগ এনে ষড়যন্ত্র মূলক ভাবে মামলায় জড়িয়ে গ্রেফতার করান।
অনুষ্ঠান প্রযোজক শামীম মৃধা ও স্ক্রীপট রাইটার শাহনাজ পারভীনের দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ এনে ৮ জন ভলানটিয়ার পরিচালক কৃষি তথ্য সার্ভিস খমার বাড়ি ঢাকা বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
এছাড়া ভলাটটিয়ারা কৃষি রেডিওর প্রযোজক শামীম মৃধা ও স্ক্রীপট রাইটার শাহনাজ পারভীনের বিরুদ্ধে আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরও একটি লিখিত অভিযোদ দাখিল করেছেন। সেটি আমলে নিয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম আবদুল্লা বিন রশিদ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
কৃষি কর্মকর্তা সিএম রেজাউল করিম বলেন, ইউএনওর কার্যালয় থেকে তদন্তের কাগজ পেয়েছি। সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করবো। অভিযোগ কারীদের মধ্যে রয়েছে সিফাত, আয়শা, সাইদুর রহমান, রাইমা, হাদিয়াতুল্লা, তামান্না উর্মি, তাওহীদ ও জান্নাতুল তামান্না প্রমুখ।
অভিযুক্ত প্রযোজক শামীম মৃধা বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ন মিথা এবং বানোয়াট। আমি কোন ভলানটিয়ারের টাকা জোর করে কেটে রাখিনি।
আরেক অভিযুক্ত স্ক্রিপট রাইটার শাহনাজ পারভিন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার অবিরুদ্ধে যে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ এবং ভলানটিয়ারদের টাকা কেটে রাখার যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ন মিথ্যা এবং বানোয়াট।
আমতলী উপজেলা কৃষি রেডিওর স্টেশন ম্যানেজার আবু জাফর মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, আমি মাত্র দুমাস হলো এখানে যোগদান করেছি। অনিয়মের বিষয়ে শুনেছি তবে এর বাইরে কিছু বলতে পারবো না। উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বিষটি তদন্ত করছেন।
তদন্ত কর্মকর্তা বরিশালের আঞ্চলিক তথ্য অফিসার কৃষিবিদ শাহাদৎ হোসেন বলেন, শামীম মৃধা এবং শাহনাজ পারভীনের বিরুদ্ধে অভিযোগরে ভিত্তিতে মঙ্গলবার সকালে সরেজমিন আমতলীর কৃষি রেডিও কার্যালয়ে এসে তদন্ত কাজ শুরু করেছি। অভিযোগ তদন্তে প্রমানিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামার বাড়ি, ঢাকার পরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহজাহান আলী বিশ্বাস জানান, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর একটি তদন্ত টিম আমতলী পাঠানো হয়েছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমানিত হলে শামীম মৃধা এবং শাহনাজ পারভীনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।